ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিপণ দিতে রাজি হলেও লিবিয়ায় খুন হয় যশোরের রাকিবুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
মুক্তিপণ দিতে রাজি হলেও লিবিয়ায় খুন হয় যশোরের রাকিবুল

যশোর: যশোরের ঝিকরগাছার রাকিবুল ইসলাম রাকিব (১৮) ভালো কাজের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ায়। তবে লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের স্বজনদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনিও একজন।

তার মৃত্যুতে ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটবাড়িয়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেন জনকির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাকিবুল।

পৈতৃক জমিজমা ও জমানো টাকা খরচ করে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। এখন সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাকিবের পরিবারের সদস্যরা। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

জানা যায়, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই লিবিয়া প্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। চার মাস আগে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় পাঠান পরিবারের লোকজন। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তার মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন।

রাকিবুলের চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দালালের মাধ্যমে রাকিবুল পাড়ি দেন লিবিয়ায়। কিন্তু দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের লোকজন টাকা দিতে রাজিও হন। এরই মধ্যে খবর এলো দালাল চক্র রাকিবুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহে বৃহস্পতিবার (ত্রিপলি হতে ১৮০ কি.মি. দক্ষিণে) বর্বোরোচিত হামলায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে রাকিবুল একজন। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না। রাতে লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই ফোনে রাকিবুলের পরিবারকে জানিয়েছেন, যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন। আমরা এখন কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মরদেহ কবে দেশে আসবে, তাও জানি না।

শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিছার উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের স্বজনদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে খাটবাড়িয়া গ্রামের রাকিবুল নামে এক যুবকও রয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা মরদেহ আনার জন্য সরকারিভাবে যোগাযোগ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
ইউজি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।