ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমাগি হ্যানে খাবার পানির জম্মের সমস্যা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
‘আমাগি হ্যানে খাবার পানির জম্মের সমস্যা’ পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: আমাইগি (আমাদের) ঘরদর পুড়ি (পড়ে) গেছে। পুকুর টুকুর তলায় গেছে এহন (এখন) এই রাস্তার কানাই পলিথিন দে (দিয়ে) থাকি। আমাগি হ্যানে (এখানে) খাবার পানির জম্মের (জনমের) সমস্যা।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া খুলনার কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রার বাসিন্দা ফাহিমা খাতুন সুপেয় পানির অভাবের কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার (২৬ মে) বিকেলে গৃহবধূ ফাহিমা বলেন, বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সুপেয় জলের পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে।

এছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে নলকূপ।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা শেখ আশিক বিল্লাহ বলেন, বুধবার রাতে (২০ মে) আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তোড়ে বাঁধ ভেঙেছে।  ফলে মিঠা পানির পুকুর ও জলাশয়গুলো নষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার।  চারদিক পানি থৈ থৈ করলেও সুপেয় পানি নেইকোথাও।

কয়রার এক নির্মাণ শ্রমিক এম এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণের উপজেলা কয়রার বড় দুই নদী কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়ার পানি এখন গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নষ্ট হয়ে গেছে নলকূপ ও মিঠা পানির পুকুর। জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় লোনা পানিতে ভাসছে মরা মাছ, পশু ও পাখি। এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে কয়রার ৫২টি গ্রামে।

পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর।  ছবি: বাংলানিউজ

এলাকাবাসী জানান, আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন লবণ পানির নিচে তলিয়ে আছে। উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, কয়রা সদর এবং মহারাজপুর ইউনিয়ন বেশি প্লাবিত হয়েছে। এই মুহূর্তে নদীতে জোয়ার ভাটার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাওয়া এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে লবণ পানির তীব্রতায় মারা যাওয়া শুরু হয়েছে মিঠা পানির ছোট বড় সব ধরনের মাছ, গাছপালা। দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এসব গ্রামে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়াও শুরু হয়েছে। জানা যায়, কয়রা পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩/১৪-২ নম্বর পোল্ডারের (চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চল) অন্তর্ভুক্ত। এর পূর্ব পাশে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ ও উত্তর পাশে রয়েছে কয়রা নদী। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৮৩ হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিতে পড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলায়, সেখানে ৪০ কিলো মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ৮০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ।

দুর্গত এসব মানুষের এখন অন্যতম সমস্যা সুপেয় পানির। চারদিকে পানি আর পানি তবু তেষ্টা মেটানোর পানি নেই।  

পানিবন্দি বেশির ভাগ মানুষের ঘরের সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা খাদ্য সংকটেও পড়েছেন।  চারণ ভূমি তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।

পানি যাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তারাই এখন পানি পাচ্ছেন না। খুলনার কয়রা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের খাবার পানি এখন দুষ্প্রাপ্য। এমন অবস্থায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবীরা পানি দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর।  ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরমোর্শেদ বলেন, আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯শ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। মিঠাপানির পুকুরগুলোও নোনা পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে 

এ অবস্থায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে কয়রা সদরে দু’টি ভ্রাম্যমাণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।  এ প্ল্যান্টটি দিয়ে লবণ পানিকে সুপেয় করা হচ্ছে।  পাশাপাশি কয়রায়৪ লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।  

‘পানিতে সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকায় এ প্ল্যান্ট নেওয়া যাচ্ছে না।  সদর থেকে বিশুদ্ধ পানি প্রশাসনের লোকজনই প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন।  যাতায়াতের ব্যবস্থা ঠিক হলে প্রত্যন্ত এলাকায় আরো দু’টি ভ্রাম্যমাণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে বলে জানান এ প্রকৌশলী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad