ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বরগুনায় আরেক নয়নের তাণ্ডব, হত্যার অভিযোগ আ’লীগ নেতার দিকে 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
বরগুনায় আরেক নয়নের তাণ্ডব, হত্যার অভিযোগ আ’লীগ নেতার দিকে 

পাথরঘাটা (বরগুনা): আবারও বরগুনা আলোচনার শীর্ষে। গত বছরে নয়ন বন্ড বাহিনী ছাত্র রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে আলোচনায় আসে বরগুনা, পরে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় নয়ন বন্ড বাহিনীর প্রধান নয়ন বন্ড। এক বছর পার হতে না হতেই আবারও আলোচনার শীর্ষে বরগুনা, হত্যাকাণ্ডের ধরন একই, শিরোনামে আরেক নয়ন। তবে এ হত্যার পেছনে এখন অভিযোগের তীর এক আওয়ামীলীগ নেতার দিকে।

বরগুনায় নদীর তীরে বেড়াতে গিয়ে খুন হওয়া হৃদয়ের ওপর স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতার নির্দেশে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি।

সোমবার (২৫ মে) ঈদের দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ঈদের দিন বিকেলে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গুলবুনিয়া পায়রা নদীর তীরে বেড়াতে যাই। গোলবুনিয়া নদীর তীরে তখন কয়েকশ মানুষের ভিড় ছিল। এ সময় কিছু মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সেখানে উপস্থিত থাকা ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজি উত্তেজিত ছেলে-পেলেদের হৃদয় ও তার বন্ধুদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এরপরই ১৫ থেকে ২০ জন হামলাকারী হৃদয়সহ তার বন্ধুদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। নদীর পাড়ে হৃদয় দৌড়ালে পেছন থেকে বারবার মারধর করে।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, লাঠি হাতে কিছু উত্তেজিত ছেলে দেখে আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা রফিক কাজি লাঠি হাতে ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ধর, ওদের ধর’। এরপরই শত শত মানুষের সামনে ওই ছেলেরা বেশ কয়েকটি ছেলেকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর আজ খবর পাই আহতদের মধ্যে হৃদয় নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।

গোলবুনিয়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ড একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিবস ছাড়াও এখানে সাধারণ মানুষ অহরহ বেড়াতে আসেন। এখানে শহর থেকে তরুণ-তরুণীরা ঘুরতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজিসহ তার ভাই কনু কাজির ছেলে নোমান, স্থানীয় আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল, লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়নসহ আবীর এবং তনিক ও তাদের সহযোগিরা তরুণ-তরুণীদের নানাভাবে হয়রানি করে। এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটে বলেও তিনি জানান।

তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রফিক কাজির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, এ ঘটনার পরপরই পুলিশের একাধিক টিম অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, হামলায় নিহত হৃদয়ের মরদেহ এখন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। মরদেহের সঙ্গে রয়েছেন তার মা ও বাবা। তাই এ ঘটনায় তারা এখন পর্যন্ত মামলা করতে পারেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, হৃদয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

এদিকে হৃদয়কে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর এলাকার মানুষের নানা জল্পনা শুরুর পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া নয়ন বন্ডের মতো আরও এক নয়নের তাণ্ডব দেখানোয় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।