ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরগুনায় প্রকাশ্যে পিটিয়ে কিশোর হত্যা

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
বরগুনায় প্রকাশ্যে পিটিয়ে কিশোর হত্যা

পাথরঘাটা(বরগুনা): বরগুনায় প্রকাশ্যে গণপিটুনির কয়েক ঘন্টা পরে মৃত্যু হয় এক কিশোরের।

মঙ্গলবার (২৬ মে) সকালে বরিশাল সেবাচিমে মৃত্যু হয় হৃদয় নামের এই কিশোরের। ঈদের খুশির মাঝেও এমন নির্মমতা হতভাগ করে দেয় স্থানীয় জনগণকে।

এর আগে বরগুনায় ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া বল্ক ইয়াডে ঘুরতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে পেটানো করা হয় হৃদয় নামের এই কিশোরকে। পরে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

হৃদয় এ বছর টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন একজন রিকশাচালক। তারা বরগুনার চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ের ব্লক ইয়ার্ডে শতশত তরুণ-তরুণী ঘুরতে যায়। ওইদিন বিকেলে হৃদয়ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিয়ে গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ারডে ঘুরতে যায়। এসময় হৃদয়ের এক বান্ধবীর সাথে দেখা হলে তার সাথে কথা বলে হৃদয়। তখন হৃদয় এবং তার বান্ধবীকে নিয়ে স্থানীয় নয়ন ও তার সহযোগিরা বাজে মন্তব্য করায় এর প্রতিবাদ করে হৃদয়।

এর কিছুক্ষণ পরেই উত্যক্তকারী নয়ন, হেলাল, আবীর, তনিক এবং নোমানসহ তাদের সহযোগিরা লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা চালায়। এসময় হৃদয় দৌড়ে বাঁচতে চাইলেও তাকে তাড়া করে পেটাতে থাকে নয়ন, হেলাল, এবং নোমানসহ তাদের সহযোগিরা।

এক পর্যায়ে লাঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হৃদয়। কিন্তু কেই তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। সাথে সাথে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা হাসপাতালে আজ সকালে হৃদয়ের মৃত্যু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে শহর থেকে তরুণ-তরুণীরা ঘুরতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজিসহ তার ভাই কনু কাজির ছেলে নোমান, স্থানীয় আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল, লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়নসহ আবীর এবং তনিক ও তাদের সহযোগিরা বিভিন্ন সময়ে অনেক অপিরিচত ছেলেমেয়েদের অপমান করতো।  এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটে বলেও তিনি জানান। হৃদয়ের বন্ধু মিঠুন রায় জানায়, হৃদয়সহ তারা সাতজন বন্ধু ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে যায়। এসময় হৃদয়ের সাথে তার এক বান্ধবীর দেখা হয়। হৃদয় তার ওই বান্ধবীর সাথে কথা বলতে থাকে। সেসময় নয়ন, হেলাল এবং নোমানসহ তাদের সহযোগিরা এনিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার কিছুক্ষণ পরেই তারা ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর আঘাত হানতে থাকে। এসময় হৃদয়ের বন্ধুরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরেও হামলা চালায় ওই সন্ত্রাসীবাহিনী। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হৃদয়কে ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

হৃদয়ের অপর এক বন্ধু ফেরদৌস মোল্লা জানান, হামলাকারীদের সবাইকে আমরা চিনি না। তবে অনেক বয়স্ক লোকজনকেও এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে। ফেরদৌস মোল্লা আরও জানায়, হৃদয় অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা একটি অটো রিকশায় করে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। মোবাইলফোনে কথা বললে হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম জানান, হৃদয় তাদের একমাত্র ছেলে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন তারা কী নিয়ে বাঁচবেন বলে আহাজারি করছিলেন তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন তার বাবার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় হৃদয়ের হত্যাকারীদের মধ্যে আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল মৃধাদের সাথে তাদের আগে থেকেই বিরোধ ছিল।

সেই বিরোধের জের ধরেই হেলালের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে তিনি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের মযনা তদন্তের পর হৃদয়ের মরদেহ বরগুনা নিয়ে আসা হবে। হৃদয়ের বাবা-মা এখনও বরগুনায় ফিরে না আসায় এ ঘটনায এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে বরগুনা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন জানান, অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

এর আগে ২০১৯ সালের জুনে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নেয়াজ রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এক বছর পরেই বরগুনায় ফের এমন হত্যার ঘটনা ঘটলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।