হয়তো জীবনে এমন ঈদ এর আগে কখনোই দেখেনি কেউ। টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর বছর ঘুরে আনন্দঘন ঈদুল ফিতর এবার এসেছে এক ভিন্ন আবহ নিয়ে।
করোনার মহামারিতে বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে বন্দি হয়েছে শিশুদের সেই বর্ণিল ঈদ। হৈ-হুল্লোড়ে প্রকম্পিত হয়ে ওঠা ঈদ উৎসব এবার যেন নিরুত্তাপ ও প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। উত্তেজনা ও আড়ম্বরহীনতা অনাবিল খুশির ঈদকে যেন একেবারেই নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। উৎসবের সড়কে নেমেছে অজানা আতঙ্ক আর শোকের নিরবতা। দুঃখ, বেদনা আর স্বজন হারানোর শোকের পাথরে চাপা পড়েছে ঈদের তামাম আনন্দ। ভিন্নমাত্রার এ ঈদে পথ-ঘাট থেকে বিনোদন কেন্দ্র সবখানে একই চিত্র। চারিকেই যেন নেমেছে রাজ্যের শূন্যতা।
অন্য আর সব ঈদে বিকেল হলেই জনসমুদ্রে রূপ নেয় রাজশাহী মহানগরের প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে পিনপতন নীরবতা।
রাজশাহী মহানগরীর বড় বনগ্রাম এলাকায় থাকা শহীদ জিয়া শিশু পার্কের মূল ফটকে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় নাড়া দেওয়া এক দৃশ্য। রাজশাহীর অন্যতম এ বিনোদনকেন্দ্রটি এখন তালাবদ্ধ। কিন্তু নানান চরিত্রের কাটুনের ভাস্কর্য আঁটা প্রাচীরের ফাঁক দিয়ে শিশুরা তাকিয়ে আছে নিশ্চুপ নিস্তব্ধ বিভিন্ন রাইডসের দিকে। শিশুতোষ মন যেন সব বাধা পেরিয়ে ছুটে যেতে চাইছে ভেতরে। হৈ-হৈ করে মেতে উঠতে চাচ্ছে নানান রাইডসের আনন্দে। কিন্তু কঠিন এক বাস্তবতা আজ যেন তাদের সব আনন্দই নস্যাৎ করে দিয়েছে।
এ বিনোদনকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে পার্কের সামনে যেতে দেখা গেছে। হাতে থাকা মোবাইলের ক্যামেরা দিয়েই অনেক অভিভাবক শিশুপার্কের সামনের সীমানা প্রাচীরে থাকা বিভিন্ন চরিত্রের কাটুনের সঙ্গে সন্তানের ছবি তুলে দিয়ে তাদের মন ভুলিয়েছেন। মিটিয়েছেন অবুঝ মনের জেদ।
অনেকে আবার শিশুপার্কের সামনে এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে গিয়েছিলেন শুধু পার্ক বন্ধ আছে তা বিশ্বাস করানোর জন্যই। কারণ করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশুপার্ক যে বন্ধ; এ কথা যেন অবুঝ মনের কচিকাঁচা শিশুরা বুঝতে চাইছে না। অগত্যা রাজশাহীতে থাকা লকডাউনের মধ্যেই চলছে আনন্দ আর উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি।
মহানগরীর শালবাগান এলাকায় অধিবাসী আশরাফুজ্জামান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের আর যে কোনো ঈদের চেয়ে ব্যতিক্রম ঈদ পার করছেন এবার। সকাল থেকে শিশুরা বাইরে বের হওয়ার জন্য অস্থির। তাদের কোনো ভাবেই বোঝানো যাচ্ছিলো না যে বাইরে সবকিছুই বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে শিশুদের পার্কের সামনে এনে বন্ধগেট দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মন শান্ত রাখার জন্য প্রাচীরের সামনে ছবিও তুলে দিয়েছেন। আপাতত এতেই তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করছেন সন্তানদের।
শিশু পার্কের সীমানা প্রাচীরের ফাঁক দিয়ে ভেতরের দিকে অসাহায়ের মত তাকিয়ে থাকা ছয় বছরের শিশু আরিফুল ও সাত বছরের শিশু শরিফুল জানালো তাদের কষ্টের কথাও। করোনায় ঘরবন্দি থেকে আর ভালো লগাছে না তাদের। কোন ভাবেই যেন ঘরের মধ্যে বদ্ধ থাকতে মন চাইছে না আর। তাই বাবাকে খুব জোর করেই নিয়ে এসেছিল শিশুপার্কের সামনে।
কিন্তু পার্কের প্রধান ফটকে তালা থাকায় বাইরে থেকে সব দেখেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। এতে মনটা খুবই বিষণ্ন হয়ে উঠেছে তাদের। এরপরও কিছু করার নেই তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
তবে যাওয়ার সময় তাদের আবুঝ চোখের চাহনি যেন বার বার বলছিল- কবে যাবে করোনা?
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এসএস/আরআইএস/