সোমবার (২৫ মে) পালিত হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর। এবার বেশ ভিন্ন এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পালিত হচ্ছে ঈদ।
করোনার এই সময়ে এসব যানবাহন চলাচলও একরকম নিষিদ্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মেগাসিটি ঢাকায় যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাদের চলাচলের ‘পাইপলাইন’এখন এসব চালকেরা। বিশেষ করে রাজধানীর ভেতরে বা বাইরে দূরের পথ পাড়ি দিতে একমাত্র ভরসা কোনো সড়কে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইক বা প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস।
মিরপুর পল্লবীর কালসী মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইক চালক ফরিদ উদ্দিন নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন। করোনা সংক্রমণের সপ্তাহখানেক পর থেকে নিজেই যাত্রী পরিবহণ করছেন। ফরিদ বলেন, প্রথম কিছুদিন বাইক চালাইনি। কিন্তু এটাই তো আয়, দিনের টাকা দিনে। এরপর থেকে অ্যাপ ছাড়াই যাত্রী পরিবহণ করছি। রোজায় অনেককে এখান থেকে গাজীপুর দিয়ে আসছি। আজকেও অপেক্ষা করছি। যদি কোনো যাত্রী উত্তরা বা অন্যকোনো দিকে যান তার জন্য। গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জ গেলেও নিয়ে যাব।
খামারবাড়ি মোড়ে একসাথে দেখা যায় বেশ কয়েকজন বাইকারকে। টিএন্ডটি মাঠ সংলগ্ন বড় গাছটার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে কথা বলেন বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সাথে। নূরে আলম নামের একজন বাইকার বলেন, আমরা নিজেরা নিজেদের সাথে পরিচিতই। সকাল বেলা এখানে সবাই আগে আসি তারপর রাইড খুঁজি। এই জায়গাটাই যেন অফিস হয়ে গেছে এই কদিনে। আজ অবশ্য দুপুরের দিকে এসেছি সবাই। অপেক্ষায় আছি রাইডের। আমাদের একজন বাইকার একটু আগে একটা রাইড নিয়ে গেল।
করোনার সময়ে ঝুঁকি আছে জেনেও কেন রাইড দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই বাইকার বলেন, আমাদের বেশিরভাগই এই ফার্মগেট এলাকার আশেপাশে মেসে ভাড়া থাকি। এবার ঈদেও বাড়িতে যাইনি। কি নিয়ে যাব? যা আয় হয়েছে তা দিয়ে কোনো রকমে টিকে আছি। বাসায় একা থাকতেও তো খারাপ লাগে। ভাবলাম এই কাজই যেহেতু করি আজও এটাকেই বেছে নেই। আমরা না পারি অনেকেই হয়ত এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে যাবেন। কেউ হয়তো অফিস বা অন্য কোনো কাজে যাবে। তাদের সাথেই এবার ঈদ হোক। আর আমার বাইকে যারা ওঠেন তাদের সবার হাত ধুয়ে উঠতে হয়। আমার সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে। আবার কেউ নেমে গেলে আমি পুরো বাইকে ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করি। আর যাত্রীরা নিজেদের হেলমেট থাকলে পরেন নইলে আমি কোন হেলমেট দেই না। একই হেলমেট সবাই পরলে সেটা আরও বড় ঝুঁকি।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার বা মাইক্রো নিয়ে বের হয়েছেন অনেক চালকই। একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে নিজের কেনা মাইক্রো ভাড়ায় চালান আনিস মিয়া। দুই মাস যাবত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। তখন থেকেই বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া যাত্রীদের পরিবহন করে আসছেন তিনি। আনিস বলেন, প্রথম মাসের গাড়ি ভাড়া দিয়ে অফিস বলেছে এরপর অফিস খোলার আগে কোনো ভাড়া দেবে না। তাদের কথাও ঠিক। গাড়ির সেবা তো তারা নিচ্ছে না। এদিকে আমার তো আর কোনো আয়ের পথ নাই। গাড়ির কিস্তিও দিতে হয় ব্যাংকে। তাই নিজেই যাত্রী পরিবহন করছি। অনেকেই ঈদের দিনেও বাড়ি যায়। তাই দেখছি কেউ আছে কিনা যে মাওয়া বা আরিচা ঘাটে অথবা টাঙ্গাইলের দিকে যাওয়ার। আজ এভাবেই ঈদ পার হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এস এইচ এস/এমএমএস