ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) সকালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিধ্বস্ত কয়রার মদিনাবাদ গ্রামের গৃহ বধূ আসমা হতাশাভরা কণ্ঠে এসব কথা বলেন।
কয়লা সদর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা শেখ আশিক বিল্লাহ বলেন, বুধবার রাতে (২০ মে) আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গেছে।
করোনার মধ্যে আম্পানের কোপ৷ এই দুয়ের প্রভাবে ঈদের খুশি এবার ম্লান কয়রাবাসীর৷
বিধ্বস্ত কয়রাবাসী জানান, একদিকে হাতে টাকা নেই, অন্যদিকে ঝড়ে শেষ সম্বলটুকু উজাড় হয়ে গেছে৷ এখন বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চাহিদা৷ এখন আর উৎসবের কথা ভাবতেই পারছি না৷ ঈদগাহ-মসজিদ, মাঠ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় পানি থাকায় অনেকেই টিকে থাকা বেড়িবাঁধ বা সড়কের ওপর ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। জানা যায়, কয়রা পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩/১৪-২ নম্বর পোল্ডারের (চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চল) অন্তর্ভুক্ত। এর পূর্ব পাশে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ ও উত্তর পাশে রয়েছে কয়রা নদী। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৮৩ হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলাবাসী, সেখানে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ৮০ শতাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ।
আম্পানের আঘাতে কয়রার চারটি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের ছোটবড় ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। কয়রায় করোনা পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য বলে দাবি করছেন স্থানীয় দূর্গত মানুষরা।
৫ দিন পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত’ অসহায় মানুষের দ্বারে ত্রাণসামগ্রী না পৌঁছানোয় ভুক্তভোগী অনেক পরিবার হাহাকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি বরাদ্দ কম থাকায় সবাইকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইউনিয়নে ৫২শ পরিবার রয়েছে। সরকারি সাহায্য এসেছে ২৫০ পরিবারের জন্য। আমার ওয়ার্ডে ৫১৭টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টি পরিবারকে সরকারি ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এমআরএম/এএটি