ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্দিন যাচ্ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের হকারদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
দুর্দিন যাচ্ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের হকারদের

মাদারীপুর: এই ঝালমুড়ি, লেবুর রসে টাটকা মুড়ি। অথবা এই যে সিদ্ধ ডিম, দেশি হাঁস-মুরগির ডিম আছে, সিদ্ধ ডিম। -এরকম নানা ধরনের ভাসমান খাবার বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর ছিল কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটের লঞ্চগুলো। 

যাত্রাপথে ঝালমুড়ি, সিদ্ধ ডিম, চানাচুর, নারকেল চিড়া, পপকর্ণ ভাজাসহ নানা ধরনের খাবারের অন্যতম ভোক্তা ছিল শিশু-কিশোরেরা। যাওয়া-আসার পথে লঞ্চে পদ্মা পার হওয়ার সময়টুকুতে এসব ভাসমান খাবারের চাহিদা ছিল ব্যাপক।

ঘাটের যাত্রীদের কাছে এই বিক্রি করেই যুগ পার করে দিচ্ছেন অনেক হকার।  

এটা স্থায়ী পেশায় পরিণত হয়েছে তাদের। দিনরাত বেশ বেচাবিক্রি হতো একেকজন হকারের। সে আয় দিয়ে একটি সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে যেতো। হঠাৎ করেই জীবনে এরকম ছন্দপতন ঘটবে তা কে জানতো? 

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত প্রায় ২ মাস ধরে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটের লঞ্চ বন্ধ। যাত্রীরা ফেরিতে পার হলেও ভাসমান খাবার কিনে খাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে কোনোমতে পদ্মা পার হতে পারলেই যেন মুক্তি মেলে তাদের। এর মধ্যে আবার ঝালমুড়ি খাওয়ার সময় কই!

গত কয়েকদিনে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ঘাটের একটা অংশ নিরব-নিস্তব্ধ। ফেরি চলাচল করলেও সাধারণ যাত্রী বহনে কড়াকড়ি রয়েছে। তবে যাত্রীদের চাপে 'কড়াকড়ি' ধরে রাখতে পারেনি ফেরি কর্তৃপক্ষ। পদ্মাপার হতে ফেরিতে নিজের জায়গা করে নিতে ব্যস্ত সাধারণ যাত্রীরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শারীরিক দূরত্বের কথা বলা হলেও ঘাট এলাকায় তা মানার সুযোগ নেই।  

গাদাগাদি করে ফেরিতে পার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘরে ফিরছে মানুষ। ফলে কারো মধ্যেই যাত্রাপথের হালকা খাবার খাওয়ার প্রবণতা নেই। শিশু-কিশোররাও এড়িয়ে যাচ্ছে এসব খাবার। ফলে বেচাবিক্রি একদম বন্ধ হকারদের।  

আব্দুল হান্নান নামে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা জানান, এক যুগ ধরে ঘাট এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে আসছেন তিনি। ব্যস্ততম এই ঘাটে জীবিকা নির্বাহের জন্য বেশ সহজ কাজই ছিল এই ঝালমুড়ি বিক্রি। সংসারও ছিল স্বচ্ছল। রোজার মাস হলেও বাচ্চাদের কাছে প্রচুর ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারতেন তিনি। লঞ্চ বন্ধ হওয়ায় গত দুই মাস ধরে সব বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, ফেরিতে লোকজন পার হচ্ছে। ফেরিঘাটে কিছুদিন ঝালমুড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করলেও বিক্রি নেই। যাত্রীদের মধ্যে আনন্দ নিয়ে চলাফেরা নেই যে তারা ঝালমুড়ি খাবে।

সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা এক কিশোর বলে, কেউ এখন ডিম খায় না। আয়-রোজগার বন্ধ। বেকার হয়ে পড়েছি। খুবই দুর্দিন যাচ্ছে আমাদের।

কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্র জানায়, লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ অনেকদিন ধরে। কয়েকটি ফেরি জরুরি প্রয়োজনে চালু রয়েছে। তবে সাধারণ যাত্রীরাও পার হচ্ছে ফেরিতে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘাটে হকারদের বেচাকেনা কমে গেছে। প্রায় বন্ধই বলা চলে। ঘাট এলাকায় হকারদের তেমন একটা দেখা যায় না এখন।  

ঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকা চলে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও এই এলাকায় এসে হকারি করে অনেকেই। ঘাটের হকাররা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই ছিল এতদিন। কিন্তু করোনা ভাইরাস দেখা দিলে হকারদের জীবনে দুর্দিন নেমে এসেছে। তাদের ব্যবসা বন্ধ প্রায়।

কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে শিবচর লকডাউনের শুরু থেকেই কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীর নির্দেশে সরকারি তহবিলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও তার সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসবে। ছন্দপতন জন-জীবনে ফিরে আসবে আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য। খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, হকারদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফিরে যাবে আগের জীবনে। প্রাণভরে উচ্চকণ্ঠে হাঁক দিয়ে বলবে 'ঝাল মুড়ি লাগবে ঝালমুড়ি। লেবুর রসে টাটকা মুড়িইই। ' সেই দিনের প্রত্যাশায় শুধু অপেক্ষা এখন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।