বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের অঞ্জনগাছী এলাকার মৃত ওয়াজ আলীর ছেলে মুরাদ আলীর কথা।
স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের সংসার ছিল তার।
তবে এবারের ঈদটা মুরাদ আলীর কাছে অন্যরকম এক আনন্দের। কারণ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২)। ২০১৯ সালে মিডিয়ায় তার অসহায়ত্বের খবর জানতে পেরে নতুন ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে র্যাব-১২। স্ত্রী, মেয়ে-জামাই নিয়ে ঈদ কাটাবেন এই ঘরেই। দুই কক্ষ বিশিষ্ট এ ঘর পেয়ে আনন্দে ভাসছে পরিবারটি।
বৃদ্ধ মুরাদ আলী বাংলানিজকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমার যুদ্ধের সাথীরা এখন সরকারী ভাতা পায়। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও আমার ভাতা হয়নি। অঞ্জনগাছীর গ্রামের আজগর, পিয়ার, নূর হোসেন, ইনতাজ, ইয়াকুব, সাদেক, আবুল, আইনাল, মনছুর, শের আলীর সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। সকলের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকলেও আমার নাম নাই। '
তিনি বলেন, ‘স্ত্রী-মেয়ে নিয়ে কুঁড়ে ঘরে থাকতাম। হঠাৎ একদিন র্যাব এসে সব দেখে কুঁড়েঘরের জায়গায় নতুন ঘর করে দেওয়ার কথা বলল। বিশ্বাস করতেই পারিনি। পরে র্যাব সদস্যরা এই দুই রুমবিশিষ্ট ঘর তুলে দিয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি। এবারের ঈদ এই নতুন ঘরেই কাটাব। '
তবে মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সম্মান চান এই বৃদ্ধ।
মুরাদ আলীর স্ত্রী ফেরদৌসা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে আমাদের মাটির কুঁড়ে ঘর ছিল। খুব কষ্ট হতো। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়তো। র্যাবের দেওয়া এই নতুন ঘর পেয়ে খুবই খুশি আমরা। '
মুরাদ আলীর মেয়ে মরিয়মও নতুন ঘর পেয়ে খুশি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই নতুন ঘর পেয়ে খুশি। এই ঈদের আগেই র্যাব সদস্যরা এসে আমাদের ঘর বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। দুইটা রুম, জানালা-দরজা সবই আছে। '
অসহায় মুরাদ আলীকে র্যাবের পক্ষ থেকে নতুন ঘর করে দেওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।
শনিবার (২৩ মে) সকালে র্যাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নতুন ঘর মুরাদ আলীকে হস্তান্তর করেন র্যাব-১২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
এ সময় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সজল কুমার সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য হারুন অর রশিদ মামুন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব-১২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহান মুক্তিযোদ্ধে জনাব মো. মুরাদ আলী জীবন বাজি রেখে যে আত্মত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তার সামান্য প্রতিদান দেবার চেষ্টা করেছে র্যাব ফোর্সেস এবং আমরা আশা করছি এই সামান্য উপহার তার ঈদ আনন্দ এর মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেবে। '
তিনি বলেন, ‘দেশের মধ্যাঞ্চলে সর্বহারা ও জঙ্গীবাদ দমন, অস্ত্র-মাদক সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে র্যাব-১২ এর ভূমিকা শুরু থেকেই প্রশংসিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানা সময়ে দূর্যোগ মোকাবিলা ও হতদরিদ্রদের পুনর্বাসনেও কাজ করে আসছে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কুঁড়ে ঘরের জায়গায় পাকা বাড়ি নিমার্ণ করে সম্মাননা জানাল র্যাব-১২। '
তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে দেশের দূর্যোগ মোকাবিলা ও হত-দরিদ্রদের পূনর্বাসনেও কাজ করে আসছে। ২০১৯ মিডিয়ায় সংবাদের মাধ্যমে র্যাব-১২ জানতে পারে মুরাদ আলীর এমন দুর্দশার খবর। র্যাব ফোর্সেস এর মহাপরিচালক মহোদয়ের প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় র্যাব-১২ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে তার পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় এবং ঈদুল ফিতরের আগেই পাকা বাড়িটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। '
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি র্যাব-১২ এর এ ধরনের জনহিতকর কার্যক্রম চলমান রাখার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন লে. কর্নেল খায়রুল।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এমএইচএম