আর স্বল্প আয়ের মানুষের প্রিয় নৌযান লঞ্চ ছিল ব্যস্ততার শীর্ষে। প্রায় ছয় কিলোমিটারের নৌরুটের পদ্মার বুকে মুহূর্তের জন্যেও থেমে থাকত না লঞ্চ-স্পিডবোটের ভেসে বেড়ানো।
কাঁঠালবাড়ী ঘাটের সবচেয়ে ব্যস্ততম লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে এখন ভুতুরে নিরবতা! নেই লোকজনের কোলাহল, ছোটাছুটি, লঞ্চের তীক্ষ্ম সাইরেনের শব্দ আর স্পিডবোট চালকের সঙ্গে যাত্রীর বাকবিতণ্ডা।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল। সেই থেকে প্রায় ৫৯ দিন ধরে সুনসান নিরবতা এই ঘাটে।
দেশের ব্যস্ততম নৌঘাটের একটি মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজারো মানুষের পদভারে প্রতিদিন মুখোরিত থাকা এই ঘাটের চিত্র পাল্টে গেছে।
কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্র জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রয়েছে। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক। যাত্রীরা এখন ফেরিতে করে পদ্মা পার হচ্ছে। অসংখ্য যাত্রী ট্রলারেও ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হয়ে থাকে।
লঞ্চ ঘাটের শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখেই একটু ভালো আয়-রোজগার হয়। সন্তানরা অপেক্ষায় থাকে ঈদের সময় তাদের বাবার বেশি টাকা উপার্জন হবে। একটু ভালো জামাকাপড়, খাবার-দাবারের আয়োজন করা যাবে। কিন্তু এ বছর সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে বাচ্চাদের। কাজ না থাকায় অর্থ সংকটে চিন্তিত হয়ে পরেছেন লঞ্চের শ্রমিকরা।
স্পিডবোটের একাধিক চালক বলেন, ২ মাস ধরে স্পিডবোট বন্ধ। ইনকামও বন্ধ। বিকল্প উপার্জনের কোনো মাধ্যমও নাই। কষ্টে আছি। এবারের ঈদ আর ঈদ নাই আমাদের। '
স্থানীয়রা জানান, ঈদের সময় উৎসবমুখর থাকতো কাঁঠালবাড়ী ঘাট। লঞ্চ, স্পিডবোট ঘাটে স্থানীয় অনেকেই হকারি করতেন। ঘুরে ঘুরে নানা জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন-ধারণের একটা জায়গা এই ঘাট। অথচ লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ থাকায় এসব মানুষও দুর্ভোগে রয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্র জানিয়েছে, নৌরুটে ৮৬টি লঞ্চ, ২ শতাধিক স্পিডবোট আর ২০টি ফেরি রয়েছে। প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে এই নৌরুটে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করতো।
বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রায় ২ মাস ধরে লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই ঘাট এলাকা এখন নিরব-নিস্তব্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
আরএ