শনিবার (২৩ মে) বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা সংলগ্ন শেরপুর রোড ও ফুলপট্টি রোডে একাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘড়ির কাঁটা যতই সামনের দিকে এগোচ্ছিলো, ততই বিকিকিনিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এর আগে বগুড়ায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর গত ১০ মে সারাদেশের ন্যায় দোকানপাট ও মার্কেট খুলে দেওয়া হয়। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ে সকাল ১০টা থেকে শহরের জিরোপয়েন্ট বাদে আশপাশ দিয়ে আসর বসান এসব দোকানিরা। এসব দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি সকাল থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভ্যানের ওপর দোকান বসিয়েই ব্যবসা করেন তারা।
তিনচাকার সাধারণ ভ্যানের চেয়ে এসব ভ্যান আকারে কিছুটা বড়। যতটুকু পারা যায় পোশাকের পসরা সাজিয়ে রাখা হয় তাতে। তবে বেশিরভাগ পোশাক এলোমেলোভাবেই থাকে। ক্রেতারা এসে এলোমেলোভাবে রাখা কাপড়ের ভেতর থেকে টেনে টেনে পছন্দের পোশাকটি বের করেন। এরপর দরদাম শুরু করেন। এগুলো স্বল্প দামের পোশাক। সস্তায় বিক্রি করা হয়। তাই এখানে দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই। গেঞ্জি মাত্র ১০০ ও টি-শার্ট ১৫০ টাকা।
প্রতিবছর ঈদ এলেই জমে ওঠে এসব দোকানের বেচাকেনা। ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা শহরের শেরপুর রোড, ফুলপট্টি রোড, কাঁঠালতলা, নবাববাড়ী রোড়, মাটিডালী, চারমাথাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করেন। বছরের ১১ মাস এ ব্যবসা হলেও ঈদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। করোনাকালে এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে করোনা ও যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনের কঠোরতায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় এসব ব্যবসায়ী ভ্যান নিয়ে ঠাঁই গেড়ে বসতে পারছেন না। তাই বলে তাদের ব্যবসা কিন্তু থেমে নেই। যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে ভ্যান দাঁড় করিয়ে বিকিকিনি করছেন।
আকাশ, হিমেল, বিদ্যুৎ, মেহেদীসহ একাধিক দোকানি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারের ঈদ একটু ভিন্নধর্মী হতে চলেছে। করোনার সংক্রমণরোধে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের স্বল্প পুঁজি। তারা চাইলেই সবকিছু করতে পারেন না। অভিজ্ঞতা থাকলেও বড় ব্যবসা করার সুযোগ নেই।
তারা জানান, শহরে প্রায় ১৫০টি ভ্রাম্যমাণ এমন দোকান রয়েছে। ভ্যানের ওপর বাহারি ডিজাইনের পোশাক উঠিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করেন তারা। প্রতিবছর এসব পোশাক কম দামে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা কিনে আনেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গেঞ্জি, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট অন্যতম। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য পোশাক রয়েছে তাদের দোকানে।
ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানে প্রতি পিস গেঞ্জি ও টি-শার্ট ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং প্যান্ট ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাদের দোকানে দরদাম করার কোনো সুযোগ নেই। দাম বলেই তারা ক্রেতাদের ডাকেন।
বগুড়ার এই ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে সিংহভাগ ক্রেতা নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ। কিন্তু প্রতিবছর ঈদে চিত্রটা অনেক পাল্টে যায়। ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানে অনেক মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষজনও এসব পোশাক কিনতে আসেন বলেও জানান এসব দোকানিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
কেইউএ/এএটি