এতো বড় বৃক্ষ, আজ কবিতার ভাষায় অধম বৃক্ষ। দুদিন আগেও যে বটগাছটি ছায়া দিত, যে গাছটির নিচে এবং ডালে অনেক প্রকৃতিপ্রেমী বসে প্রকৃতি দেখতো, বটগাছটি প্রকৃতির ছামিয়ানা হয়ে থাকতো আজ সেই বট গাছ দুটি নিজেই অসহায়, অধম; নিজেই এখন অন্যের সহযোগিতা চাচ্ছে।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পায়রা নদের তীরের গোলবুনিয়া পর্যটন এলাকায় ছিল দুটি বটগাছ। ভ্রমণ পিপাসুদের বটের ছায়ায় বসে পড়ন্ত বিকেলে পায়রা নদের সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখার জন্য এক টুকরো বেঞ্চও ছিল। পাড় ভাঙা পায়রা প্রায় ছুঁয়ে দিচ্ছিল বটতলা। তবু যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, হয়ত আরও এক যুগ টিকে থাকতে পারত বটগাছটি।
কিন্তু প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে মাথা নুইয়ে দিতে হয়েছে সেই বটগাছ দুটিকে। বাতাসের ঝটকায় সমূলে উপড়ে নদীতে এখন সেই বটগাছ দুটি, বেঞ্চটিও মিলিয়েছে পায়রার কাঁদাজলে। প্রিয় বটগাছের এমন করুণ পরিণতি দেখতে প্রস্তুত ছিলো না অনেকেই। তাইতো বড্ড আক্ষেপ- ‘আহা সেই বটগাছটিও নেই!’
ভ্রমণপিপাসু বরগুনার জুলকার নাইন শাহীন দেখতে গিয়েছিলেন পর্যটন স্পট গোলবুনিয়া। তিনি বটগাছ দুটির এমন পরিণতি দেখে খুবই দুঃখ পেয়েছেন। কয়েকটি ছবি তুলেছেন আহত বটের অসহায় আত্মসমর্পণের। ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লিখেছেন, ‘আহা সেই বটগাছটিও নেই!’
শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, গোলবুনিয়া প্রতিদিন গড়ে শতাধিত মানুষ ভ্রমণে আসে পায়রার ঢেউ আর নদীতে জেলেদের মাছ শিকার দেখতে। সন্ধ্যা নামলে সূর্য ডোবে পায়রার জলে। এখানে ঘুরতে এসে আমিও বটমূলের বেঞ্চে বসে এমন সব দৃশ্য দেখেছি অনেকবার। শুধু আমিই নই, এখানে যারা আসেন বটের ছায়ায় মুহূর্তের জন্য হলেও বসেননি এমন কাউকে পাওয়া দায়। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি বটগাছ দুটি উপড়ে পড়েছে দেখে।
কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট প্রকেটকশন নেটওয়ার্কের (সিইপিএন) সভাপতি প্রকৃতি প্রেমিক লেখক রুদ্র রুহান বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু ভাঙন কবলিত এলাকা তাই সরকারি উদ্যোগে বটগাছ দুটি সংরক্ষণে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। বটগাছ দুটি ঝড়ে উপড়ে যাওয়ার খবর প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুব কষ্টের।
নদীদের পাড়ে প্রকৃতি দেখানো বটগাছ দুটি ভেঙে পড়ায় স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমী, সাংবাদিক মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে। বরগুনার সিনিয়র সাংবাদিক মনির হোসেন কামালের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে এমনটাই প্রমাণ মেলে। তিনি লিখেছেন ‘আমরা বরগুনার গোলবুনিয়া পায়রা নদী পাড়ের এই বটগাছটিকে বাঁচাবো, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে গাছটিকে ফেলে দিয়েছে। আমরা এটিকে দাঁড় করিয়ে বাঁচাতে চাই। গাছটির নিচে বসে আবার নদী পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অক্সিজেন নিতে চাই। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও প্রকৃতি প্রেমীরা এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে গাছটিকে বাঁচাই। ’
কথা হয় সিনিয়র সাংবাদিক মনির হোসেন কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা এ প্রকৃতি দেখানো বটগাছ দুটি আগের চেহারায় দেখতে চাই। ঝড়ের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত গাছ দুটি জাগিয়ে আবারও প্রকৃতি দেখাতে চাই প্রকৃতি প্রেমীদের। এজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ। জেলা প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃতির স্বার্থে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমরা দ্রুত বটগাছ দুটি আগের মতো প্রকৃতি যেন দেখাতে পারে সে ব্যবস্থা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এনটি