ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আম্পান: স্বপ্ন ভাসলো জলে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
আম্পান: স্বপ্ন ভাসলো জলে

কুষ্টিয়া: ফরিদুল ইসলাম, বয়স ৩৫। ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী। সংসারে সুখ আনতে পেশা পরিবর্তন করে শুরু করেন মাছ চাষ। ২০১৩ সালে তিনি পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। 

এরশাদ নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা মৎস্য চাষির সঙ্গে বর্গায় মাছ চাষ করছেন। এ বছর তাদের পুকুরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ ছিলো।

প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকায় প্রতিবছরই ভালো লাভ হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা পানিতে একাকার। ধানক্ষেত আর মাছের পুকুর একাকার হয়ে জলাশয়ের রূপ নিয়েছে। টানা বৃষ্টির পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গিয়েছে।  

এদিকে পুকুরের মাছের মতো ভেসে গেল ফরিদুল-এরশাদের স্বপ্নগুলো।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়ীয়া এই দুই মৎস্য চাষি ধার-দেনা করে পুকুরে মাছের চাষ করেছিলেন। রোজার পরে বাজারজাত করার আশা ছিলো। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে টানা দুদিন বৃষ্টি হলে পুকুর ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে।

মাছ চাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। এর পরে স্থানীয় যুবক এরশাদের সঙ্গে পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে ২০১৩ সালে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা হিসাবে ৫ বিঘা পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। রুই, মৃগেল, গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষ করি। এতে বেশ ভালো লাভ হয়। এর পরে আর পিছনে তাকায়নি।

তিনি বলেন, এ বছর ১২ বিঘা পুকুর বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিভিক্তিক ও বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করেছি। এরশাদ ও আরো এক জনের সহায়তা নিয়ে তিনজন মিলে মাছ চাষ করেছি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ৯০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। ধার-দেনা করে মাছ ছেড়েছি পুকুরে।

ভেসে যাওয়া পুকুর।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩ মণ মাছ ছাড়া হয়েছিলো পুকুরে। এর মধ্যে ১০ মণ রুই, দুই মণ মৃগেল, পাঁচ মণ গ্রাস কার্প, সাত মণ জাপানি (মিনার কার্প), দুই মণ কাতলা ও দুই মণ মনোসেক্স তেলাপিয়া। গত বছর ৭৫ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছিলাম। সেই মাছ বিক্রি করেছিলাম ২ লাখ টাকার বেশি।  
এ বছর ৪ মাস আগে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছি। ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করবো বলে আশা করেছিলাম।

মাছ চাষি এরশাদ বলেন, কচুরিপানা, টোপা পানাসহ পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। এজন্য আমাদের এখানে দ্রুত মাছ বাড়ে বাড়তি খাবার দেওয়া লাগে না। এ বছর মাছের বেশ ভালো বৃদ্ধি হয়েছে। চার মাস আগে ছাড়া মাছ এখন বেশ বড় বিক্রির উপযোগী হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা দুই দিন বৃষ্টি। বুধবার (২০ মে) সারারাত ঝড় আর বৃষ্টি। এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পুকুরের চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমাদের।

তিনি আরও বলেন, ঝড়ের রাতে মানুষ যখন বাড়িতে আমরা দুজন পুকুরের পাড়ে। চোখের সামনে চারিদিক থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুকুরের পাড় তলিয়ে যায়। ধানক্ষেত, পুকুর সব একাকার হয়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ বের হতে দেখেও কিছুই করতে পারিনি।

মিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজিবুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। যদি নির্দেশনা আসে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সহযোগিতা করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে এলাকা জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।