ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জীবন চলে জোয়ার-ভাটা মেনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
জীবন চলে জোয়ার-ভাটা মেনে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। কপোতাক্ষের পাড়ের কাশির হাট খোলা স্লুইস গেট, তার পাশের বেড়িবাঁধ, গাজীপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন পাতাকাটা মহল্লার ৪০-৫০টি পরিবার। জোয়ার এলেই চারিদিকে থৈ থৈ পানি। ভাটা হলে একটি এনজির সমিতি ঘরে এ পরিবারগুলোর রান্না-বান্না হয়। পানিবন্দি এসব মানুষও থাকেন সমিতির ঘরে।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে পানিবন্দি খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি গ্রামের আশরাফ গাজী এসব কথা বলেন। প্লাবিত এলাকা।                     <div class=

ছবি: বাংলানিউজ" src="https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2020May/bg/1-(1)20200523123827.jpg" style="border-style:solid; border-width:1px; margin:1px; width:100%" />শনিবার (২৩ মে) সকালে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আর মাটির ঘর পানিতে ডুবে ভেঙে গেছে। দিন চলে যাচ্ছে কিন্তু তাদের কেউ খোঁজ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই গ্রামের বাসিন্দা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাবেক ছাত্র ইব্রাহিম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একদিকে করোনা আবার সর্বনাশা আম্পানে আমাদের কয়রার মানুষের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অসহনীয় ক্ষতি কেমনে যে পূরণ হবে আর কবে যে এই লবণ পানির ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা পাবো এটাই এখন চিন্তার বিষয়। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে কয়রার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা, গাজীপাড়া, কাশিরহাট খোলা, ঘাতেরগিরি বেড়িবাঁধ দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন চোরামুখা, আংটিহারা, জোড়সিং ও কয়রা সদরের হরিণখোলা, গোবরার ঘাটাখালী প্লাবিত হয়েছে। জোয়ার-ভাটা হিসাব করে আমাদের এখন চলতে হচ্ছে।

প্লাবিত এলাক।  ছবি: বাংলানিউজখোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, আম্পানে খুলনা উপকূলে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া বাঁধের পুরোটাই কয়রা উপজেলায়। এছাড়াও দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন লবণ পানির নিচে তলিয়ে আছে। উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, কয়রা সদর এবং মহারাজপুর ইউনিয়ন বেশি প্লাবিত হয়েছে। এই মুহূর্তে নদীতে জোয়ার ভাটার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাওয়া এলাকায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে লবণ পানির তীব্রতায় মারা যাওয়া শুরু হয়েছে মিঠাপানির ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ও গাছপালা। দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ।

মদিনাবাদ এলাকার নির্মাণ শ্রমিক এমএম সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনায় এই ভয়াবহতার মাঝেও কয়রা উপজেলার প্লাবিত এই এলাকার মানুষের এখন বেঁচে থাকার আশাটা নিদারুন এক কষ্টের। এই দূষিত পরিবেশের কারণে বাড়তে পারে বিভিন্ন রোগ বালায় যেটা সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়ানক পরিস্থিতি আনতে পারে। পানিবন্দি কয়রাবাসী।  ছবি: বাংলানিউজইতোমধ্যে প্লাবিত হওয়া দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসহায় মানুষগুলো তাদের নিজেদের রক্ষার পাশাপাশি তাদের গবাদিপশু ভাসিয়েও অন্য লোকালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেদের পালিত গবাদিপশু গরু, ছাগল খুবই দম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও ছোট স্থানে গ্রামের লোকজন মিলে বাঁধ বাধলেও বড় ধরনের বেড়িবাঁধগুলোর জন্য কয়রাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

সাধারণ মানুষের একটাই দাবি, তারা আর ত্রাণ চান না, নিরাপদ বেড়িবাঁধ হলে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। আর নিজেদের ত্রাণ/খাবার নিজেরা জোগাড় করে নিতে পারবেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খুলনার উপকূলীয় এলাকা কয়রায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের সদস্যরা কয়রার দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালি, সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও উত্তর বেদকাশির রতনাঘেরি কাটকাটা এলাকায় বাঁধে মাটি, বালু ভরাট কাজ শুরু করে। এতে দুর্ভোগে পড়া সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখছেন। প্লাবিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজখুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এখনই বাঁধে মেরামত কাজ করতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কয়রায় তিনটি পয়েন্টে বাঁধ মেরামত কাজ করবে সেনাবাহিনী।

সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কয়রার কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে জোয়ারের সময় লবণ পানি থেকে জমির ফসল রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করেছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। তবে সেনাবাহিনী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করায় মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।