ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অভাবের তাড়নায় সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী টানছি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
অভাবের তাড়নায় সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী টানছি

মানিকগঞ্জ: চাকরি করতাম সাভারের আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায়। কয়েকদিন আগে সকালে কারখানায় গিয়ে দেখি ছাঁটাইয়ের তালিকায় আমার নাম। অফিসের বসদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে দুই দিন পর দেখা মিললো, কথাও হলো কিন্তু চাকরিটা আর ফিরে পেলাম না। 

মা-বাবা, বউ-বাচ্চাদের নিয়ে ঈদ করতে হবে। সেমাই কিনবো সেই টাকাটাও নাই কার কাছে হাত পাতবো, কে কি মনে করবে সেজন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভাড়ায় নবীনগর থেকে পাটুরিয়ায় যাত্রী নিয়ে ট্রিপ দিচ্ছি।

জানি না কার কাছ থেকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হবো সেই ভয়ও নেই, শুধু ছোট ছোট বাচ্চা ও পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসি দেখার জন্য ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছি।

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা জেলার ধামরাই সদর উপজেলার রবিউল ইসলাম।

গণপরিবহন যেহেতু বন্ধ সে কারণে অনেকেই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যাত্রীদের ঢাকার নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে দিচ্ছে ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। ৬০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাকা দিয়েও অনেকে আসছে ঘাট এলাকায়।
শনিবার (২৩ মে) সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাত্রী বহন করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। অধিকাংশ মোটরসাইকেলেরই রেজিস্ট্রেশন নেই, নেই সুরক্ষার জন্য হেলমেট। যাও দুই একটি চালক তা মেনে ট্রিপ দিচ্ছেন কিন্তু যাত্রীদের জন্য নেই সেই সুরক্ষা সরঞ্জামাদি, আবার অনেক সময় তিন জন যাত্রী নিয়ে ছুটে চলছেন চালকরা।

নবীনগর থেকে মোটরসাইকেলে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী যাত্রী সবুজ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, নবীনগর থেকে কোনো গাড়ি নাই পাটুরিয়া ঘাটে আসার। অফিস ছুটি হয়ে গেছে বাসায় একা ব্যাচেলর মানুষ কীভাবে থাকবো, কি খাবো এই সব বিষয় চিন্তা করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। নবীনগর এসে দেখি কোনো গাড়ি নাই, বাধ্য হয়ে ৬০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাকা দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসলাম। এখন শুধু ফেরিতে নদী পার হওয়ার অপেক্ষা। কে জানে নদী পার হওয়ার পর আর কি নাটক অপেক্ষা করছে।  

ভাড়ায় মোটরসাইকেলের আরো এক চালক লুৎফর মিয়া বলেন, দিনে দুইটা ট্রিপ দিতে পারি নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। ভাড়াটা একটু বেশি হয় সেটাও বুঝি কিন্তু নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাটে অাসতে তেল লাগে প্রায় ৫শ টাকার এবং ঘাট থেকে তো খালি যেতে হয়, সব মিলিয়ে দুইটা ট্রিপ দিতে পারলে এক হাজার টাকা থাকে। অভাবের তাড়নায় দেশের এই ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যেও যাত্রী টানছি।

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষেধ রয়েছে। সকাল থেকেই মহাসড়কে মোটরসাইকেল আরোহীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আমরা মাঝে মাঝেই মোটরসাইকেল তল্লাশি করছি। যারা নিরাপত্তার সরঞ্জামাদি না নিয়ে মহাসড়কে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।