ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

তবুও বাড়ি ফেরা চাই...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
তবুও বাড়ি ফেরা চাই...

মাদারীপুর: আর তিন বা চার দিন পরেই ঈদুল ফিতর। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারে ঈদের আনন্দে স্বতঃস্ফুর্ততার ঘাটতি রয়েছে অনেক। করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। 

আবার এরই মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ নিয়ে। কখন যে আছড়ে পড়বে উপকূলে।

ক্ষয়ক্ষতি হবে জনসবতি ও জানমালের।  

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে শহুরে মানুষেরা ছুটে যায় পরিবার-পরিজনের কাছে। তার শিকড়ে। যাত্রা পথের হাজারো ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ির উঠানে পা রাখতে পারলেই আসে স্বস্তির নিঃশ্বাস। ম্লান হয়ে যায় পথের ক্লান্তি।

গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে নামে যাত্রীদের ঢল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো সুযোগ নেই ঘাট এলাকায়। বরং করোনা সংক্রমণের শতভাগ ঝুঁকিই যেন তৈরি হচ্ছে নৌরুটে।  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনস্রোত ঠেকাতে সোমবার (১৮ মে) দুপুর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল। জরুরি প্রয়োজনে মাত্র ২/৩টি ফেরি চললেও তাতে সাধারণ যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের ঢাকা থেকে ফেরা বন্ধ হয়নি। ফলে মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে বাড়তে থাকে যাত্রীদের ভিড়। শত শত যাত্রীতে ভরে যায় শিমুলিয়া ফেরিঘাট। বেলা বাড়তে থাকলে ফেরিতে পার হতে না পেরে বিকল্প পথ বেছে নেয় যাত্রীরা। শিমুলিয়া ঘাট থেকে দূরে পুরাতন মাওয়া ঘাটের আশপাশসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রলারে চেপে বসে ঘরমুখো যাত্রীরা। পদ্মা উত্তাল, অনিরাপদ নৌযান! তবুও বাড়ি ফেরা চাই!

বুধবার (২০ মে) সকালেও বিকল্প ওই রুটটি দিয়ে যাত্রীরা পদ্মা পার হচ্ছে। তবে আম্পানের প্রভাবে সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস থাকায় পদ্মা কিছুটা উত্তাল রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এরই মধ্যেও পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

মাওয়া থেকে বিকল্প নৌরুট দিয়ে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে দূরে পদ্মা চরে এসে নামছেন যাত্রীরা। পায়ে হেঁটে বালুচর আবার কখনো অটোরিকশায় করে মহাসড়কে এসে উঠছেন। জীবনের ঝুঁকি আর ঝক্কিঝামেলা মাথায় নিয়ে পদ্মা পার হতে পেরেই স্বস্তি তাদের।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান,‘মঙ্গলবার হঠাৎ করেই একটি ট্রলার এসে থামে পদ্মার চরে। তাতে প্রায় অর্ধ শতাধিক যাত্রী। তারা ঢাকা থেকে এসেছেন। এরপর থেকে আজকে বুধবার (২০ মে) সকালেও যাত্রীরা আসছেই বিকল্প রুটে।

ফেরি বন্ধ থাকায় ট্রলারে করে পদ্মা পার হচ্ছেন। এপারে এসে চরের মধ্যে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে পায়ে হেঁটে সড়কের দিকে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। পুলিশের ভয়ে শিমুলিয়া ঘাট এড়িয়ে দূরের কোনো এক স্থান থেকে যাত্রী নিয়ে আবার কাঁঠালবাড়ী ঘাটে না এসে পদ্মার চরাঞ্চলে এসে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এভাবেই বিকল্প পথে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের পদ্মা পার হয়ে আসতে দেখেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরো জানান, বুধবার ভোর থেকে বাতাসের বেগ বেশি। এভাবে যদি ট্রলারে করে যাত্রীরা নদী পার হতে থাকে তবে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে কাঁঠালবাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিমুলিয়া অংশের পদ্মার কোনো এক স্থান থেকে ট্রলারে করে যাত্রীদের নিয়ে আসা হচ্ছে কাঁঠালবাড়ী প্রান্তে। বুড়ির খেয়া নামক স্থানসহ নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে পদ্মার চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে। পদ্মা পার হতে ভাড়া হিসেবে গুনতে হচ্ছে ৪ শ থেকে ৫শ টাকা। বাড়ি ফেরার তাড়া থেকেই ৫/৬ কিলোমিটারের নৌপথ শত শত টাকা দিয়ে পার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, লঞ্চ-স্পিডবোট অনেকদিন ধরেই বন্ধ। ফেরি চলাচল করতো। তাও সোমবার দুপুর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো বাড়ি যেতেই হবে। ঢাকা থেকে ঘাটে আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাই আবার ফিরে যেতে চাইনি। পরে বিকল্প উপায়ে পদ্মা পার হয়েছি। অনেকেই এভাবে পার হচ্ছে।

কাঁঠালবাড়ী ঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ফেরি চলাচল বন্ধ। তারপরও শিমুলিয়া থেকে ট্রলারে করে যাত্রীরা কাঁঠালবাড়ী এলাকায় এসে নামছে। আমরা মঙ্গলবার চারটি ট্রলার আটক করেছি। মাঝ পদ্মা থেকেও কিছু ট্রলার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের সচেতন ও সতর্ক করা হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে যাতে পদ্মা পার হতে না পারে সেজন্য আমাদের অভিযান চলছে। নদীপথ অনেক বিস্তৃত। ফলে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পার হয়ে চলে আসছে মানুষ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের টহল নৌযান নেই। ট্রলার বা স্পিডবোট নিয়ে যেতে হয়। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।