তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বর্তমান পরিস্থিতে শীতলপাটি বুননের পাটি শিল্পীদের বরিশাল ও ঝালকাঠির পল্লীগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সাধারণ ছূটির কারণে বেচাবিক্রি না থাকায় বন্ধ রয়েছে উৎপাদনও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের বাকেরগঞ্জের কাঁঠালিয়া, হেলেঞ্চাসহ বেশকিছু গ্রামের প্রায় ৫০০ মানুষ পাটি বুননের ওপর নির্ভরশীল। যুগ যুগ ধরে তারা পাটি বুনলেও ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারেননি। এখান থেকে পাটি বাংলাদেশের সর্বত্র, ঢাকা এমনকি সিলেটে বিক্রি হয়। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় দুই মাস ধরে এখানে পাটি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় পাটিশিল্পী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সিদ্ধেশ্বর দত্ত জানান, বছরখানেক আগে সিলেট থেকে পাটি বোনা শিল্পীদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর থেকে এখানের শিল্পীরা উন্নতমানের পাটি তৈরি করতে শুরু করে। কিন্তু করোনার কারণে তারা উন্নতমানের পাটি বানিয়েও দারুণ বিপাকে। গত দুই মাসে কাঁঠালিয়া গ্রামের ৫৫ ঘরের পাটি শিল্পীরা কোনো আয়-রোজগার করতে পারেনিনি।
এদিকে একটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষে ৩০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও সিংহভাগ বাদ পড়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁঠালিয়া গ্রামের অর্চনা রানী নামে এক পাটি শিল্পী।
বেচাবিক্রি না থাকায় শুধু বাকেরগঞ্জ নয়, ঝালকাঠী জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের হাইলাকাঠী, ডহরশংকর, সাঙ্গুর গ্রামের কয়েকশ’ পারিবার কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে।
হাইলাকাঠী-ডহরশংকর শীতলপাটি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তাপস পাটি শিল্পী জানান, প্রতিসপ্তাহে অন্তত শতাধিক পাটি এখান থেকে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু করোনার কারণে পাইকার আসতে না পারায় তারা বসে থেকে সময় পার করছেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় কৃষি কাজেও নামতে পারছেন না। স্থানীয় মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩৫ জনের নামে ত্রাণ এলেও বাকিরা বঞ্চিত রয়েছেন।
তবে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহাগ হাওলাদার জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পাটি শিল্পীদের নাম অর্ন্তভুক্তের জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় পাটি শিল্পীদের সহায়তা পৌঁছানো হবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে বরিশালে এসব পাটি শিল্পীদের উন্নয়ন নিয়ে গত ৩ বছর ধরে কাজ করে আসছেন উন্নয়ন সংগঠক রান এর পরিচালক রফিকুল আলম।
তিনি জানান, বিভাগের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠীর নলছিটি ও রাজাপুরের হাইলাকাঠীতে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের দুই হাজারেরও বেশি মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এসব এলাকায় উন্নত মানের পাটিগাছ যেটি স্থানীভাবে ‘পাইত্রা’ বলে তার উৎপাদন ভালো হয়। তাই পাটি শিল্পটাও সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে এসব এলাকায়। তবে এদের উন্নয়নে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে এ পেশা থেকে অনেকেই সরে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
এমএস/আরবি