ঢাকা: আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। যদি আজ চাঁদ না উঠলে শনিবার ঈদ নিশ্চিত।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণে ধনীদের পাশাপাশি দরিদ্রদেরও আছে অধিকার। আর এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ইসলাম ধর্মে ‘ফিতরা’র রীতি চালু করা হয় যা থেকে ঈদের নাম হয়েছে ঈদুল ফিতর। অন্যান্য বছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে মূলত ‘ফিতরা’র টাকা সংগ্রহ করবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো।
নগরীর উচ্চবিত্ত মানুষগুলোও রোজার শেষদিকে ‘ফিতরা’র পাশাপাশি যাকাতের টাকা, কাপড়ও বিতরণ করেন। আর তাই এ ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় দরিদ্র মানুষের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা যায় রাজধানীতে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আয়ের ওপর নির্ভর করে বাড়ি চলে যাবেন ঈদের আগের রাতে আবার অনেকে ঢাকায় ঈদের নামাজ শেষে বাড়ির পথ ধরবেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীতে ছিন্নমূল মানুষের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে বাড়তে শুরু করে। রাজধানীর আশেপাশে-তো বটেই দূরদূরান্ত থেকে আসছে এসব ছিন্নমূল মানুষের দল।
টঙ্গী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ ঢাকার আশেপাশের এসব জেলা শহর ছাড়াও দেশের দারিদ্রপীড়িত জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়ের মত দূরদূরান্ত থেকেও এসব মানুষ সাহায্যলাভের আশায় পাড়ি জমিয়েছেন রাজধানীতে।
কমলাপুর রেলস্টেশন, সায়েদাবাদ-মহাখালী-গাবতলী বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসব মানুষদের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা যায়।
ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘ফিতর’ার টাকা পেতে যত আগে ঢাকায় আসা যায় লাভের পরিমাণও তত বাড়তে থাকে।
ঈদের দিন ‘ফিতরা’র জন্য রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দান সংলগ্ন হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গন, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ প্রায় সব মসজিদেই স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ভৈরব থেকে আসা ভিক্ষুক জ্যোৎস্না বিবি বাংলানিউজকে জানালেন, রোজার শেষদিকেই মূলত ধনীরা ফিতরাসহ যাকাতের অর্থ, শাড়ী কাপড় বিলাতে শুরু করে। আর তাই এসময় একটু কষ্ট করতে পারলে কখনো কখনো পরিবারের সবার জামা কাপড়তো জোগাড় করা যায়ই, সেইসঙ্গে টাকাপয়সাও খুব একটা খারাপ আসে না।
ছিন্নমূল মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর অন্যান্য এলাকাগুলোর তুলনায় গুলশান, বারিধারা, বনানী, ধানমণ্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোয় যাকাত-ফিতরার টাকা তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। আর তাই টাকা আদায়ে ছিন্নমূলদের প্রধান টার্গেট থাকে এসব এলাকা।
কুড়িগ্রাম থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ করিমন নেসা জানান, বয়স বেশি হওয়ায় অন্যদের সঙ্গে শক্তিতে পেরে না ওঠায় মনমত টাকা, কাপড় জোগাড় করতে পারেননি। নাতির একটি পোশাকের জন্য শুধু অপেক্ষা করছেন, সম্ভব না হলে সন্ধ্যার পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন।
এবছর নগরীর প্রায় প্রতিটি স্থানে সুশৃঙ্খলভাবে ফিতরা ও যাকাত আদায়ের কারণে এখন পর্যন্ত হুড়োহুড়িতে পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে বা কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১০