ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পুলিশের আবার ঈদ কিসের?’

তুহিন শুভ্র অধিকারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১০
‘পুলিশের আবার ঈদ কিসের?’

ঢাকা: ‘আরে ভাই পুলিশতো পুলিশই, পুলিশের আবার ঈদ কিসের? পুলিশের কোনো ঈদ নাই। পুলিশ তো আসলে মানুষই না!’

সারাদেশ যখন ঈদের আনন্দে ভাসছে, পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঢাকাবাসী যখন ছুটছে নাড়ীর টানে, ঠিক এমনই এক রাতে রাজধানীতে দায়িত্বরত একদল পুলিশের কাছে ঈদের কথা জিজ্ঞেস করতেই আসে এমন উত্তর।



রাজধানীবাসীর একটি অংশ যখন ঈদ আনন্দে উন্মত্ত, চারদিকে কেনাকাটার ধুম, আপনজনের কাছে ফেরার জন্য করছে প্রাণান্ত চেষ্টা, একই সময়ে এই আনন্দকেই নির্বিঘ্ন করতে পরিবার-পরিজনের আনন্দকে দূরে ঠেলে কর্তব্য পালনে সচেষ্ট পুলিশ সদস্যরা।
 
বুধবার রাত সোয়া ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে শাহবাগ থানার সাব ইন্সপেক্টর মামুন আলীর নেতৃত্বে টহলরত পুলিশের কয়েকজন সদস্য। ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে অনেকটা অভিমান মেশানো কণ্ঠেই তারা বলেন, ‘ইচ্ছে করেই বাড়ী যাচ্ছি না। ঈদে দুই-তিন লাখ টাকা কামাই করতে হবে। ’

বিষয়টা পরিষ্কার হয় এস আই মামুন আলীর কথায়- ‘দেখেন না মানুষ ভাবে আমরা এ সময় ঘুষ নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করি। আসলে আমরা যে নিজেদের ঈদের আনন্দ ভুলে এই জনগণের ঈদ নির্বিঘ্নে করতে কাজ করছি তারা তা মনে না করে, উল্টো ভুল বোঝে। ’

পুলিশের মিরপুর ইউনিটের নায়েক সিদ্দিকুর রহমান জানালেন, গত চার বছর ধরে ঈদে বাড়ী যান না তিনি। দায়িত্ব পালনের মধ্যেই ঈদ আসে আবার চলেও যায়। ঈদ কখন চলে যায় বুঝতেই পারি না। পুলিশের কোনো ঈদ নাই ভাই। পুলিশ আসলে কোন মানুষই না!

কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরও পরিবার, আত্লীয়-স্বজন আছে। আমাদেরও ইচ্ছে করে তাদের নিয়ে ঈদ করতে, কিন্তু এই ঈদেতো ছুটি পেলামই না কোরবানীর ঈদে যে ছুটি পাবো তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ’

এস আই মামুন আলীর অভিজ্ঞতা একটু ভিন্নরকম। গত আট বছর ঈদে বাড়ী যান না তিনি। তাই যখনই বাড়ী যান তখন ঈদ মনে করে পাঞ্জাবি গায়ে ঘুরে বেড়ান।

ঈদের দিন কি করবেন এমন প্রশ্নে তাদের অভিমানটা রূপ নেয় ক্ষোভে। একজন বললেন, সেদিনতো আরও বেশি ব্যস্ততা। রুটিন দায়িত্বের পাশাপাশি ভিআইপিরা যেখানে নামাজ পরবেন সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

উল্লেখ্য, ঈদ উপলক্ষে শুধু ঢাকা শহরের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ১০ হাজার পুলিশ মাঠে থাকবে।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মো. ওয়ালিদ হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, ঈদ উপলক্ষে পুলিশ বাহিনীর ২০ ভাগের মতো সদস্য ছুটি পায়, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তা আরও কম।

শুধু পুলিশই নয়, সেবা ও জরুরি কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ করার সুযোগ নেই। পরিবর্তে খুশির এই দিনে পালন করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরে কথা হয় ফায়ার ফাইটার সরদার সুমনের সঙ্গে। বললেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে না পারায় খারাপতো লাগবেই, কিন্তু চাকরিতো রক্ষা করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কাজী নাজমুজ্জামান জানালেন, ডিফেন্সে শুধু ঈদ কেন আসলে কোনো আনন্দ উদযাপনেরই সুযোগ নেই।

সদর দপ্তরে কথা হয় সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল হালিমের সঙ্গে। তিনি জানালেন ঈদ উপলক্ষে অধের্ক কর্মকর্তা ও কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরদিন তারা ফিরে এলে অন্য সদস্যরা বাড়ি যেতে পারবে। এই ঈদে যারা বাড়িতে ঈদ করবে তাদের পরবর্তী ঈদে ঢাকায় থাকতে হবে। তবে লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ডুবরিদের কোনো ছুটি নেই।

তিনি বলেন, ‘একটু খারপাতো লাগেই তবে এসময় ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই দায়িত্ব পালন করতেই হয়।

সব জায়গা ফাঁকা হয়ে গেলেও যেখানে লোকের ভিড় লেগেই থাকে সেটি হলো হাসপাতাল। আর এ কারণে ঈদের মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হয় ডাক্তারদের।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আজিজুল কাহ্হার বলেন, ঈদ উপলক্ষে যারা কাজ করবে এরই মধ্যে তার তালিকা হয়েছে। তবে প্রশাসন ডাকলে সবাইকেই দায়িত্ব পালন করতে আসতে হবে।

আর তথ্য সেবা দিতে ঈদের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।