ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অভাবের কথা বলতে না পারাদের পাশে ‘হার্টবিট ফাউন্ডেশন’

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২০
অভাবের কথা বলতে না পারাদের পাশে ‘হার্টবিট ফাউন্ডেশন’ হার্টবিট ফাউন্ডেশন

রাজশাহী: দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এক মুঠো ত্রাণের জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গেছে। প্রায় দুই মাস কর্মহীন থাকা মানুষগুলোর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। সকাল থেকে সড়কের মোহনায় তীর্থের কাকের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে চাল-ডালের জন্য।

যারা চেয়ে-চিন্তে খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন তারা কোনো রকমে দিন শেষে একবেলা খেয়েও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের অবস্থা আরও করুণ!

তারা না পারছেন কারো কাছে নিজের অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতে।

আর না পারছেন ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে। করোনাকালে আত্মসম্মান খোয়াতে না চাওয়া এই মানুষগুলোর জীবনে যেন নেমে এসেছে বিভীষিকা। তাই সমাজের এমন না বলতে পারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘হার্টবিট ফাউন্ডেশন’।

তবে ত্রাণ নয়, তারা তাদের এবারের কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন- ‘রমজানের উপহার’। ত্রাণ বললে অনেকে তা নিতে চাইবেন না। এমনটা ভেবেই রমজানের উপহার দিতে মাঠে নেমেছেন তারা।

রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে এরই মধ্যে তারা রমজানের উপহার বিতরণ কার্যক্রম শেষ করেছেন। সিটি করপোরেশন এলাকার বাকি ১৩টি ওয়ার্ডে তাদের উপহার বিতরণ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৫ রমজান পর্যন্ত। গত ৭ রমজান থেকে তারা এই কাজ শুরু করেছেন।

তাদের রমজানের উপহারের প্রতিটি ব্যাগের মধ্যে রয়েছে- সাড়ে ৫ কেজি করে চাল, ৮০০ গ্রাম মসুর ডাল, ১ লিটার করে সয়াবিন তেল, এক কেজি করে প্যাকেটজাত আটা, সাড়ে ৩ কেজি আলু, এক কেজি সেমাই, ৮০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ, এক কেজি চিনি, একটি করে টিস্যু পেপার রোল।

কোনো রকম ফটোসেশন নেই তাদের। নেই কোনো নাম-ডাক। নেই প্রচার-প্রচারণাও। নীরবে নিভৃতে ব্যাগে করে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তা প্রয়োজনীয় মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে রাজশাহীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। সেই ধরনের মানুষের দুয়ারে যাচ্ছেন যারা লোকলজ্জায় প্রকাশ্যে কারো কাছে কিছু চাইতে পারেন না। কোথাও লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। তাদের কেউ ফোন করে জানালেও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এই উপহারের ব্যাগ।

রাজশাহী মহানগরীতে ক’জন উদ্যোমী তরুণ শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছেন হার্টবিট ফাউন্ডেশন। নিজেদের পকেট খরচ বাঁচিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন তহবিল। সংগঠনের ২২ জন সদস্য প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে জমা করেন। এছাড়া যে যখন পারেন- নিজের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে থেকে ফান্ড সংগ্রহ করেন। এভাবে বছর শেষে একটি বড় অংকের টাকা জমা হয়।

সেই টাকা দিয়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন হার্টবিট ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সদস্য। রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের তারাই একমাত্র বেসরকারি রেজিস্টার্ড সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও রয়েছে তাদের ভেরিফাইড পেজ।

গত পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করে এই সংগঠনটি। আর তাদের আঁতুড়ঘরের গল্পটাও আলাদা। শুরুটা ছিল 'স্কুল' নিয়ে।

অন্য দশটির স্কুলের চেয়ে একটু আলাদা। এটি সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পথ শিশুদের স্কুল। যারা তিন বেলা পেটপুরে খেতে পায় না। পায় না ঠিকমতো লেখাপড়ার সুযোগও। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুদের জন্য উদ্যোগী হয়ে ওঠে এই স্বপ্নবাজ তরুণরা।

হার্টবিট ফাউন্ডেশন নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণরা মিলে গড়ে তোলে ‘হার্টবিট স্কুল’। এটি অনলাইন স্কুল। এর পর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে নানানভাবে সমাজের দরিদ্র, নিপিড়ীত ও প্রান্তীক জনগোষ্ঠিকে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'হার্টবিট ফাউন্ডেশন'।

রাজশাহী হার্টবিট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ আক্তার রোহিত বাংলানিউজকে জানান, এবছরই প্রথম নয়। গত পাঁচ বছর থেকে তারা এমন কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তবে প্রতিবার রমজান মাসের দেওয়া উপহারে থাকা নিত্যপণ্যের সঙ্গে এবার করোনা সংকটের জন্য যুক্ত হয়েছে চাল-ডাল,তেল ইত্যাদি।

রাজশাহী হার্টবিট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহরিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবী। তাদের উদ্দেশ্য হলো করোনা সংকটের কারণে যারা খেয়ে না খেয়ে মুখ বুঁজে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন; তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের আত্মসম্মানে যেন আঘাত না লাগে সেভাবে গোপনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রমজানের উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। এমন মানুষদের চিহ্নিত করতে এলাকার স্থানীয়দের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এজন্য তাদের সংগঠনের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক কাজ করছেন। দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের সেবায় তারা এভাবেই নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে চান। পাঁচ বছর থেকে তারা এই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত ৭ রমজান থেকে তাদের এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ রমজান পর্যন্ত চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
এসএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।