ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যবসা বন্ধ, এখন বন্দি পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২০
ব্যবসা বন্ধ, এখন বন্দি পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ খাঁচায় পশুপাখির পরিচর্যা করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় (ঢাবি) সংলগ্ন কাঁটাবন এলাকার রাস্তাটি দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে রংবেরঙের মাছ। এছাড়া কানে ভেসে আসবে বাহারি পাখির কিচিরমিচির কলতান। বিভিন্ন ধরনের পশুপাখিতে ভরা এটি কোনো বন নয় বরং ঢাবি মার্কেটে গড়ে ওঠা পোষা প্রাণীর এক জমজমাট বিক্রয়কেন্দ্র ‘কাঁটাবন ফিশ অ্যান্ড পেট এনিমেল মার্কেট’।

নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদার বাইরে মানুষের সৌখিনতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এ পোষাপ্রাণীর বাজার। এখানে প্রায় ৫০টিরও বেশি পশুপাখির দোকান রয়েছে।

 অথচ লকডাউনের কারণে এসব পশুপাখির আর্তনাদে এখানকার আকাশ যেন ভারি হয়ে উঠে। লকডাউনের কারণে বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। তাই এখন দুই বেলা খাবার দিয়ে এসব পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখায় প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যসায়ীদের। খাঁচায় খাবার দিচ্ছেন এক ব্যক্তি।  ছবি: ডিএইচ বাদলআগে পশুপাখির দোকানগুলো খোলা নিয়ে অনেক কড়াকড়ি ছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্দেশনার পর সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই সময়ে পশুপাখিদের খাবার দেওয়াসহ খাঁচা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় দোকানগুলোতে। তবে বেচাকেনা বন্ধ চলছে না। বন্দি সৌখিন পশুপাখিদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাঁটাবনের আদি সৌখিন বিতান। এখানে দেশি-বিদেশি কুকুর ও বিড়াল বিক্রি করা হয়। এই দোকানে প্রতিমাসের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া ১০টা কুকুর ও ১৫টি বিড়ালের জন্য আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার খাবার লাগে। কর্মচারী খরচসহ এই দোকানে মাসে এক লাখ টাকা খরচ। অথচ বেচাকেনা শূন্য। চীনের উহানে পশুপাখির বাজারে থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে কেউ এসব পশুপাখি কিনতে আসছে না। অথচ বুঝে ওঠার আগেই লকডাউন। এখন এসব বন্দি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা বাদ দিয়ে এসব বন্দি পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখায় প্রধান চ্যালেঞ্জ। খাঁচায় বাহারি রঙের মাছ।  ছবি: ডিএইচ বাদলআদি সৌখিন বিতানের মালিক মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের আগে সবকিছু বাদ দিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকতো। অথচ এখন মাসে সবসহ এক লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ধারণা পশুপাখির বাজার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। এজন্য কেউ পশুপাখি কিনতে আসছে না। আমরাতো আগে বুঝতে পারিনি। এখনতো কুকুর-বিড়াল মেরে ফেলতে পারি না। প্রতিদিন দুই বেলা খাবার দেওয়া লাগে। তা নাহলে খাঁচার মধ্যে এসব প্রাণী কান্না করে। এখন ব্যবসার চিন্তা বাদ এসব পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখায় দায় হয়ে গেছে। এখানে দেশি-বিদেশি এবং দুর্লভ প্রজাতির কুকুর লকডাউনে বন্দি। এরমধ্যে অন্যতম জার্মানী শেফার্ড, স্পেজ, ডোবার মেন, লেভরা ডগ, গোল্ডেন রিট্রিভার, ডালমাসিয়ান, পার্ক প্রভৃতি অন্যতম। কুকুর প্রজাতি ভেদে মূল্য পাঁচ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

লকডাউনে বন্দি ঘুঘু, মুনিয়া, ময়না-টিয়া, কোয়েল, তোতা-কবুতর, হাঁস-মুরগির অসংখ্য প্রজাতির পাখি। বন্দি অস্ট্রেলিয়ান পাখি লাভবার্ড। রয়েছে লক্ষ্যা, সিরাজী, গোলা, গিরিবাজসহ অসংখ্য প্রজাতির কবুতর। এছাড়াও ভারতীয় পাখি স্ট্রবেরি, পাকিস্তানি পাখি ককাটেল, ম্যাকাও, গ্রেভার্ডসহ রয়েছে নানা প্রজাতির বিদেশি পাখি। সর্বনিম্ন ২৫০ টাকার মুনিয়া পাখির জোড়া থেকে ২০ লাখ টাকার ম্যাকাও বা গ্রেভার্ডের মতো বিদেশি পাখি রয়েছে। এসব পাখিকে খাবার দিয়ে কোনোভাবে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। যেমন বার্ডস লাভার কর্নারে ২০০ থেকে ৩০০টা ছোট পাখি রয়েছে। অন্যান্য সময় মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ থাকতো। অথচ এখন বেচাকেনা বাদ দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার খাবার খরচ দিতে হচ্ছে। খাঁচায় পানি দিচ্ছেন এক ব্যক্তি।  ছবি: ডিএইচ বাদলদোকানের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখন দোকানে বেচাকেনা বন্ধ। পাখিগুলোর জন্য প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার খাবার দিতে হয়। এভাবে কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারি আল্লাহ বলতে পারবে। দোকান ভাড়া ও কর্মচারী ভাড়া আছে। আমি দিনে আসি শুধু পাখিগুলো খাবার দিতে।

 লকডাউনে আটকা সৌখিন সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও দুর্লভ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী যেমন কচ্ছপ, শামুক, কাঁকড়া ও তারামাছ।  কাঁটাবনের এ সৌখিন মাছের বাজারে প্রায় ১শ প্রজাতির বাহারু মাছ রয়েছে। মাছের এসব প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গোল্ডফিশ, ফাইটারফিশ, হাইফিন প্লাটি, রেমিরোজি, গ্লাস ফিশ, রুই কিং ইত্যাদি। এখানে ৩০ টাকা মূল্যের গোল্ডফিশ জোড়া থেকে শুরু করে এক লাখ টাকার রেড অরোয়ানা মাছও রয়েছে। করোনার কবলে বন্ধ রয়েছে এসব মাছ বেচাকেনা। এসব দামি মাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য দিনে একবার খাবার দেওয়াসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বন্দি পশুপাখি ও বাহারি মাছ নিয়ে বিপাকে বিক্রেতারা।    

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২০
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।