ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নতুন করে করোনা শনাক্ত: শিবচরে স্বস্তির আকাশে কালো মেঘ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
নতুন করে করোনা শনাক্ত: শিবচরে স্বস্তির আকাশে কালো মেঘ! ছবি প্রতীকী

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে নতুন করে এক নারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্বস্তির আকাশে যেন কালো মেঘের ছায়া দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত না হওয়ায় এক ধরনের স্বস্তি দেখা দিয়েছিলো শিবচরের জনসাধারনের মনে। তবে গত ২২ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক নারীর নমুনা রিপোর্টে পজেটিভ আসে।

পরে সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলার কাঁঠালবাড়ী এলাকার এক নারীর নমুনায় করোনা পজেটিভের খবরে স্বস্তির জায়গা দখল করে নেয় শঙ্কায়। নতুন করে আবারো করোনায় শনাক্তের খবরে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এমনটা প্রকাশ করেন।

কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকার এক কলেজছাত্র বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল শিবচরে কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে এমনটাই দেখছিলাম এবং তাতে করে একটা স্বস্তি অনুভব করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার করোনা শনাক্ত হওয়ায় শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলাই উচিত।

আরেক ব্যক্তি বলেন, শিবচর লকডাউন। করোনা প্রতিরোধে সবসময় বাড়িতেই থাকছি। অতি প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যাইই না। এর মধ্যে কিছুদিন ধরে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের কোনো খবর ছিলো না। বেশ স্বস্তিতে ছিলাম। ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন লকডাউনে থাকলে পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই আক্রান্তের খবরে স্বস্তি উবে গেছে!

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৯ মার্চ উপজেলা প্রশাসন উপজেলার করোনা আক্রান্ত রোগী থাকায় পৌরসভার ২টি ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের ১টি গ্রাম ও বহেরাতলা ইউনিয়নের ১টি গ্রামসহ চারটি এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করে। মূলত ওই চারটি এলাকায় তখন করোনা রোগী ছিলো এবং চারটি এলাকাই ইতালিফেরত প্রবাসী অধ্যুষিত।

এরপরে প্রথমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর আবারো করোনায় আক্রান্ত হলে গত ৬ এপ্রিল সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো উপজেলা লকডাউনের ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। উপজেলার সঙ্গে অন্যান্য স্থানের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর টহল বাড়তে থাকে।

এরপর গত ১৯ তারিখ রোববার পুনরায় আক্রান্ত হওয়া ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে এবং এরপর প্রতিদিনই পরীক্ষার জন্য মাদারীপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো নমুনার রিপোর্টে শিবচরের কাউকে পজেটিভ পাওয়া যায়নি। এক প্রায় সপ্তাহ পর গত ২৬ ও ২৭ তারিখ পাওয়া রিপোর্টে উপজেলায় নতুন করে আরো দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে একজনের মারা যাওয়ার তিনদিন পর করোনা শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্ত হওয়ায় দুই এলাকায়ই বেশকিছু পরিবারকে লকডাউন করেছে প্রশাসন।

শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার উপজেলার কুতুবপুরে মারা যাওয়া এক নারীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এলে ওই গ্রামের ৫০টি পরিবারকে লকডাউন করে রাখা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার কাঁঠালবাড়ী এলাকায় আরো এক নারীর করোনা পজেটিভ শনাক্ত হলে তাদের বাড়িসহ আশ-পাশের বেশকিছু বাড়ি লকডাউন করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, সোমবার রাতে পাওয়া রিপোর্টে করোনায় আক্রান্ত ওই নারীকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তিনি কিছুদিন আগে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর থেকে শিবচরে তার বাড়িতে আসেন। আসার পরই তিনি সর্দি-জ্বরে ভুগেন। গত ২৪ তারিখ তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে ২৭ তারিখ রাতে রিপোর্ট এলে আমরা করোনা পজেটিভ পাই।

শিবচর থেকে পরীক্ষার জন্য নিয়মিত নমুনা পাঠানো হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নমুনা মাদারীপুরে পাঠাই। সেখান থেকে ঢাকা পাঠানো হয়।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সবগুলো উপজেলার নমুনা একত্র করে আমরা একদিন পর পর ঢাকায় পাঠাই। সেক্ষেত্রে রিপোর্টও এক/দুই দিন পর পর আসে।

গত ২০ মার্চ লকডাউনের পর থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীর নির্দেশে শিবচর দরিদ্র, হতদরিদ্র পরিবার, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।