ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩৪০ বস্তা চাল গায়েব!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
সিলেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩৪০ বস্তা চাল গায়েব! ট্রাকবোঝাই চালের বস্তা। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: সিলেটের জকিগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জব্দকৃত চাল নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মিল মালিক ও ডিলারের কাগজের হিসাব অনুযায়ী ৩৪০ বস্তা চাল গায়েব করা হয়েছে। মিলারের চালানে ৬৮৬ বস্তা চাল উল্লেখ থাকলেও জব্দকৃত গাড়িতে মিলেছে ৩৪৬ বস্তা। বাকি ৩৪০ বস্তা চালের হদিস মিলছে না বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া আটককৃত ডিলার ও মিল মালিকের মুখের কথায় ও কাগজে মিল পাচ্ছে না প্রশাসন। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২২৮ বস্তা করে ৬৮৪ বস্তা চাল আসার কথা।

কিন্তু ডিলার বলছেন গাড়িতে ছিল ৫৭০ বস্তা।

আর তাই সঠিক হিসাব নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিল মালিক, ডিলার ও ডিলারের প্রতিনিধিসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরাসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

এমনটি জানিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিজেন কুমার সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, মিল থেকে ডিলারকে দেওয়া কাগজে ৬৮৬ বস্তা চালের হিসাব রয়েছে। কিন্তু তারা মুখে বলছে ৩০ কেজির বস্তা ছিল ৫৭০টি। আর গাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে ৩৪৬ বস্তা। ফলে কাগজে কলমে ৩৪০ বস্তা, মুখের হিসাবে ২২৪ বস্তা চালের হদিস নেই। তাছাড়া এতগুলো চাল নিয়ে রওয়ানা হলেও প্রশাসনকে কেন অবহিত করা হয়নি। এমনকি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাও চাল আসার খবর জানেন না। ধারণা করা হচ্ছে, মিল থেকে বেরোনোর পর রাস্তায় চাল গায়েব করা হয়ে গেছে।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের বাংলানিউজকে বলেন, মিল থেকে চাল নিয়ে গত রাত ১০টায়। উপজেলার কালিগঞ্জে পৌঁছে রাত ১২টায়। যদিও তারা দোষ দিচ্ছেন লোকজন চাল লুটপাট করে নেওয়ার। কিন্তু লুটপাট হওয়ার থাকলে রাতেই হতে পারতো। প্রকাশ্যে লুট হওয়া চালের ২২ বস্তা জব্দ করা হয়েছে। বাকি চাল রাতেই মিল থেকে বের করার পর গায়েব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চালের রাজারা জানেন ‘এতো চাল গেলো কোথায়? কাগজে ৬৮৬ বস্তা, মুখে বলছেন ৫৭০ আর লুটপাট হওয়া ৪৪ বস্তা উদ্ধারসহ জব্দ করা হয়েছে ৩৪৬ বস্তা। তাদের মুখের হিসাব ধরেই ২২৪ বস্তা চালের হিসাব নেই।

এ ঘটনায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, আটকদের মধ্যে রয়েছেন ডিলার আব্দুল আজিজ, ডিলারের ২ প্রতিনিধি জয়নাল মিয়া ও আব্দুল মুকিত, ট্রাকচালক কামরুল ইসলাম ও হেলপার ছইদ উদ্দিন, ট্রাক থেকে চাল লুটকারী দেলওয়ার আহমদ, বিপ্লব আহমদ এবং সিলেটের গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগরীর মেঘনা অটোরাইস মিল মালিক শফিকুল ইসলাম। আটককৃতরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

খোদ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রুমানা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ৩টি ইউনিয়নের ২২৮ জন করে পাওয়ার কথা। সে হিসেবে ৬৮৬ বস্তা চাল আসার কথা। যা কাগজে উল্লেখ আছে। তারা মুখে বলছেন ৫৭০ বস্তা। সে হিসাবেও ২২৪ বস্তার অমিল রয়েছে। আর চাল আসার বিষয়ে তিনি নিজেও কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে তিনি নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।    

রোববার (২৬ এপ্রিল) উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে ট্রাকভর্তি চালের বস্তাগুলো জব্দ করা হয়। বস্তা প্রতি ৩০ কেজি ওজনের ৫৭০ বস্তা চাল কসকনকপুর, মানিকপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়নে নিয়ে যাওয়ার কথা ডিলারের। কিন্তু পথেমধ্যে আরেকটি দোকানে চাল নামানোর ঘটনায় জনতার রোষানলে পড়তে হয় ওই পরিবেশককে। একপর্যায়ে জনতা উত্তেজিত হয়ে চালের গাড়িতে লুটপাট করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এএসপি সার্কেল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লুন্ঠিত ৪৪ বস্তাসহ ৩৪৬ চাল জব্দ করেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad