ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২০
কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

মৌলভীবাজার: তীব্র খরার পর প্রাণ ফিরে এসেছে চা বাগানে। টানা দু’দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছে ফ্যাকাসে ভাব কেটে গিয়ে সেগুলো সবুজে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। পুরো বাগানজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ।
 

বৃষ্টিধারা গায়ে মেখে চা বাগানের পুরো সেকশন (চা গাছের নির্দিষ্ট এলাকা) চোখ মেলেছে দু’টি পাতা একটি কুঁড়িরা। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য  উপকারী বলে জানিয়েছেন চা বিশেষজ্ঞ।

 
 
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা বাগানগুলো চালু থাকার ফলে হাজার হাজার কেজি চা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে চা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
 
এছাড়াও চা শ্রমিকদের নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে চা পাতা চয়ন করতে দেখে গেছে।  
সারিবদ্ধভাবে চা পাতা জমা দেবার দৃশ্য।  ছবি: বাংলানিউজশ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ১ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি হলো- ৩ এপ্রিল ১৩ মিলিমিটার, ১২ এপ্রিল ৩ মিলিমিটার, ১৬ এপ্রিল ৯ মিলিমিটার, ১৭ এপ্রিল ৪৩ মিলিমিটার, ১৮ এপ্রিল ২৪ মিলিমিটার এবং ১৯ এপ্রিল ১৭ মিলিমিটার।
 
তিনি গত বছর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের হিসাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ এপ্রিল ৩৯ মিলিমিটার, ২ এপ্রিল ৫ মিলিমিটার, ৩ এপ্রিল ৩০ মিলিমিটার, ৫ এপ্রিল ১ মিলিমিটার, ৯ এপ্রিল ১৮ মিলিমিটার, ১০ এপ্রিল ২৬ মিলিমিটার, ১৭ এপ্রিল ১ মিলিমিটারসহ মোট ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২৯ এপ্রিল ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।  
 
এ আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, প্রচণ্ড খরা গেলো এবার। এবছর খরার পরে বৃষ্টিপাত শুরু হলো। এর ফলে প্রকৃতিতে পাতাগুলো আরো সবুজ হয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
 
বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান ও ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো তার আপন সজিবতা ফিরে পেয়েছে। যেখানে আগে প্রায় চা গাছগুলোই শুকনো ছিল এখন সবগুলোই সবুজ হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়; দু-তিনদিনের এই বৃষ্টিপাতের ফলে নতুন স্যুটিং (কুঁড়ি) বের হয়ে এসেছে; মাত্র তিন/ সাড়ে তিন ইঞ্চি বৃষ্টি পাওয়ার পর। আমরা পাতা চয়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি।   
নারী শ্রমিকদের চা পাতা চয়ন।  ছবি: বাংলানিউজতিনি আরো বলেন, এবার তীব্র খরা হয়েছিল। আমরা প্রতিদিন চা বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও চা গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলাম না। এ ছাড়াও ইয়াং টি (নবীন চা) এর মাঝে ইরিগেশনের দৈনিক খরচ পড়ে যায় হাজার হাজার টাকা। এখন এই প্রাকৃতিক বৃষ্টি হওয়ায় এখন আমরা ইরিগেশন খুলে ফেলেছি। আপাতত আর প্রয়োজন নেই এটির।
 
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা বাগানগুলো চালু রাখার নির্দেশনা স্বাগত জানিয়ে এ চা বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারতে এক মাস পরে তারা চা বাগানগুলো চালু করতে যাচ্ছে। এক মাসে তাদের যত ক্ষতি হয়েছে আমরা এই ক্ষতি থেকে পুরোপুরিভাবে বেঁচে গেছি।
 
‘চা বাগান বন্ধ হলে অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়তো আমাদের চা শিল্প। আমরা একমাস আগে যেটা বুঝেছি ভারত এখন সেটা বুঝতে পারছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়ার চা বাগানগুলোতে এখন অতিরিক্ত বুড়ো হয়ে যাওয়া কুঁড়িগুলোকে কেটে কেটে ফেলে দিচ্ছে। ওই চা গাছগুলোতে আবার নতুন স্যুট (কুঁড়ি) আসতে ৪০ থেকে ৪৩ দিন সময় লাগবে। এভাবেই ইন্ডিয়ার চা পাতা চয়নে প্রায় এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে গেলো। আমরা এদিক থেকে অ্যাডভানটেজ (উপকারিতা) পেয়েছি। ’  
 
তিনি বলেন, আমরা নারী চা শ্রমিকদের জন্য নিয়মিতভাবে সেকশনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিয়ে চা পাতা চয়নের কাজগুলো করিয়ে যাচ্ছি।
  
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।