ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শেষ ইচ্ছায় বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় ডা. মঈন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
শেষ ইচ্ছায় বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় ডা. মঈন

সিলেট: নিজ গ্রামে বাবা-মায়ের পাশেই শায়িত হলেন করোনায় মৃত্যুবরণ করা প্রথম চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিন। মারা যাওয়ার আগে শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার মরদেহ সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ ঢাকা থেকে নিয়ে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা।  

এদিন রাত ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তরখুরমা নাদামপুর গ্রামের বাড়িতে পরিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।


 
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মঈন উদ্দিন ওই গ্রামের মরহুম মুন্সি শিকদার আলীর ছেলে।
 
সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল এতথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় রীতি মেনে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। নিজ বাড়িতে ডা. মঈন উদ্দিনের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। জানাজায় পাঁচ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন ডা. মঈন উদ্দিনের চাচাতো ভাই পোস্ট মাস্টার ইসরাইল মিয়া।
 
জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাতক উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা তাপস শীল, এএসপি সার্কেল বিল্লাল হোসেন, ওসি মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
 
এলাকার লোকজন জানান, এলাকার মানুষের জানাজায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। মরদেহ ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পর পরই জানাজার নামাজ পড়ে দ্রুত মরদেহ দাফন করা হয়।
 
বুধবার ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান ডা. মঈন উদ্দিন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রেখে গেছেন। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ডা. মঈন উদ্দিনের বড় দুই ভাই আগেই মারা যান। তিন বোন রয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। তার স্ত্রী পার্ক ভিউ মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. ইফ্ফাত জাহান। তার শ্বশুর নুর আহমদ এবং শাশুড়িও চিকিৎসক ছিলেন। তার বাবা মরহুম মুন্সি সিকদার আলী একজন আলেম ছিলেন।
 
মেধাবী চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিন মেডিসিনের পাশাপাশি কার্ডিওলজিরও চিকিৎসক ছিলেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১৯৯৮ সালে তিনি এফসিপিএস’র পাশাপাশি কার্ডিওলজিতে এমডি করেন।
 
তার শিক্ষাজীবন শুরু ছাতকের উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে স্থানীয় ধারণ নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং সিলেটের এমসি কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যালে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পাসের পর তিনি এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন।
 
স্বাস্থ্য ক্যাডারে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের ২০ মে তিনি এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ কলেজে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি শুক্রবার এলাকায় বিনা পয়সায় রোগী দেখতেন তিনি। যে কারণে এলাকায় তিনি গরীবের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।