ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনায় করুণ পরিস্থিতির কথা জানালেন বাকশাল নেতার মেয়ে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
করোনায় করুণ পরিস্থিতির কথা জানালেন বাকশাল নেতার মেয়ে

করোনা মোকাবিলায় অঘোষিত লকডাউনে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিবারের কী করুণ পরিস্থিতি, ফেসবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেই করুণ পরিস্থিতির কথা জানালেন এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বাকশাল নেতার মেয়ে।

প্রধানমন্ত্রীকে জানানো বাকশাল নেতার মেয়ের সেই করুণ পরিস্থিতির কথা বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আজ অনেক দুঃখভরা মন নিয়ে আপনার সামনে আমার মনের আকুতিটুকু বলার জন্য লাইভে দাঁড়িয়েছি। আজ আমরা লকডাউনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি প্রায় দশদিন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং বাকশাল নেতার মেয়ে। ইনি আমার বাবা। আজ দশদিন যাবৎ আমরা কীভাবে যে জীবন-যাপন কাটাচ্ছি, সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে। তো, আজ দশ বছর যাবৎ আমার বাবার জীবনী নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, অনেকের কাছে হাত পেতেছি। সবাই আমাকে সাহায্য করার কথা বললেও বাস্তবে কারো কাছে কোনো সাহায্যটুকু পায় নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা চার ভাই-বোন। আমাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ভাই। সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করে এ পরিবারের সংসার চালায়। আজ ৫/৬ দিন ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে কিন্তু কেউ টাকা দিতে পারছে না করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতির কারণে। আমরা কী খেয়ে যে বেচেঁ আছি তা আল্লাহই জানেন। হুম এ করুণ পরিস্থিতি আল্লাহর হুকুম, তা মেনে নিয়ে ঘরে থাকতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে কষ্ট পাচ্ছে সেটা যদি আপনি একবার দেখতে পেতেন, হয়তো আপনিও কান্নায় ভেঙে পড়বেন। আমার বাবা যিনি আপনার বিয়েতে দায়িত্ব পালন করেছিল চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবে। এই আমার বাবার ছবি, দাগ নেওয়া যে ছবিটা আছে ইনি আমার বাবা, বাকশাল নেতা। জাতির পিতা যখন বাংলাদেশে বাকশাল সংগঠন করতে যাচ্ছিল, তখন জাতির পিতা ১৯৭২ সালে এ চিঠিটি পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্য দিয়ে। তখন আমার বাবা সাতকানিয়া-লোহাগাড়াতে বাকশাল গঠন করেছিল এবং আমার জ্যেঠুও ছিলো। আমার আব্বার আপন জ্যেঠাতো ভাই, উনি হচ্ছেন আশুতোষ মাহাজন। উনিও আমার আব্বার সঙ্গে বাকশাল গঠনে প্রচার-প্রচারণা করে যাচ্ছিলেন। আমার বাবা কিন্তু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছেন। জমিদার পরিবারের সন্তান। বাকশাল গঠন করার পর আমার বাবা ও জ্যেঠুকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তৎকালীন শাসক কংগ্রেস সিরাজ সিকদার। তিনি (সিরাজ সিকদার) শান্তি বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। পরবর্তীতে ৮ মার্চ, ১৯৭৫ সালে দিবালোকে বাজারে আমার জ্যেঠুকে মেরে ফেলেন। তা শোনার পর জ্যেঠুর জন্য জাতির পিতা নিজেই বাদী হয়ে শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আমরা বাবাকে আত্মরক্ষার জন্য লাল পাসপোর্টসহ লাইসেন্সধারী বন্ধুক দিয়ে ছিলেন জাতির পিতা। এমতাবস্থায় আমার জ্যেঠুকে হত্যার পাঁচ মাস পর জাতির পিতাকে সপরিবারকে হত্যা করে ঘাতকরা। আমার বাবা ওই সময়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় প্রতিবাদ করেছিল। প্রতিবাদ করাতে রাত দুইটার সময় আর্মিরা তাকে নিয়ে যায়।

আজ আমাদের এ পরিণতি কেন, তা আমার পিতার মুখেই শুনুন, আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাটিয়াতে। সেখানে আমাদের অনেক কিছু বুঝানো হলো এবং আমাদের উপর অনেক নির্যাতন করেছে। এরপর আমার কাছ থেকে এক খানা মুছাখানা (মুসলেখা) নিয়েছে এবং বলেছেন আপনি কোনো অবস্থাতেই স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিসহ কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। অন্যথায় আপনাকে আমরা মেরে ফেলবো। এরপরও আমি গোপনে গোপনে স্বাধীনতার সপক্ষে কাজ করেছি।

তিনি লাইভে আরও অনেকই কথা বলেছেন। লাইভটি দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ