ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকার বাইরে করোনা রোগী বেড়েছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
ঢাকার বাইরে করোনা রোগী বেড়েছে

ঢাকা: প্রতিদিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (৯ এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১১২ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ৬২ জন এবং ঢাকার বাহিরে ৫০ জন। এর আগে দিন ৮ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিল ৫৪ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৫ জন। দুই দিনের হিসাবে ঢাকা শহরে রোগী বেড়েছে দেড়গুণ। ঢাকার বাইরে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ গুন রোগী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৭ এপ্রিল থেকে আইইডিসিআর এর নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিটি সঠিক ছিল। এর আগে যে পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করেছিল তারমধ্যে ত্রুটি ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, দুই দিনের হিসাব থেকে বোঝা যায়, ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরের রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আরো পাঁচটা দিন একই হারে, একই নিয়মে যদি আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পারে। তাহলে আমরা সহজেই হিসাব করতে পারবো রোগীর সংখ্যা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সেবা সম্প্রসারিত হওয়ার পর থেকেই দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে রোগীর সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাবে। নমুনা সংগ্রহ ও নমুনা পরীক্ষার পদ্ধতি সঠিক হলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে।

তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার তাগিদ দিয়েছে বেশি বেশি পরীক্ষা করার জন্য। এতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়লেও সার্বিকভাবে রোগী চিহ্নিত করা গেলে, চিকিৎসাসেবায় আনা গেলে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ, যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা ছিল সেটা বহুলাংশে কমে যায়। এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, গত ২৪ ঘন্টায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩০জন।

জানা যায়, ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত মোট ৩৩০ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার ভিতরে ১৮৫ জন। ঢাকার বাহিরে ১৪৫ জন। এরমধ্যে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে ৫৯ জন রোগীশনাক্ত হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন,
নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন যে সবরোগী পাচ্ছি তারা ওইসব ক্লাস্টারভুক্ত এলাকা থেকে গিয়েছে। অনেকগুলো জেলায় যখন রোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে তখন তারা বলেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়। আমাদের কতটুকু ঘরে থাকা প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জের নিয়ম কানুন একটু ভিন্ন। কেউ কারো কথা শুনতে চায় না। লকডাউন মানতে হবে। কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। এগুলো না মারলে সেনাবাহিনীকে কঠিনভাবে মাঠে নামতে হবে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত যত রোগী আমরা পেয়েছি, তাদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের সংক্রমণ হওয়ার প্রথম জায়গাটা জনসমাগম। তাই যেকোনো ধরনের জনসমাগম, অপরিচিত জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের ঘরে থাকতে হবে।

‘নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা ভাইরাসের জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি। এখন নারায়ণগঞ্জকে অন্য জেলা থেকে আলাদা করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হওয়া ১১২ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই ৬২ জন শনাক্ত হয়েছে। বাকি সবাই ঢাকার বাইরে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের আছেন ১৩ জন।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ১১২ জনের মধ্যে পুরুষ ৭০ জন, নারী ৪২ জন। বয়স বিভাজনের ক্ষেত্রে ১০ বছরের নিচে আছে তিনজন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ মধ্যে ২৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরে মধ্যে ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৩ জন, ৬০ এর বেশি বয়সের বেশি রয়েছেন ১১ জন।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাসিন্দা। তিনি পুরুষ, বয়স ৬০ বছরের অধিক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ঘরে থাকার জন্য সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সবাই ঘরে থাকছেন না। ঘরে থাকতে হবে। আর এজন্য এখন সংক্রমণ ব্যাধি আইন প্রয়োগ করতেও আমরা দ্বিধাবোধ করছি না।

জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ভিতরে নয়টি প্রতিষ্ঠান নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মোট ৬১৮টি। ঢাকার বাইরে সাতটি প্রতিষ্ঠানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৭৯টি। মোট ১৬ টি প্রতিষ্ঠানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১হাজার ৯৭টি। এরমধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ৯০৫টি। এ পর্যন্ত সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ হাজার ১৭৫টি।

এছাড়া অদ্যাবধি মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ১০ হাজার ৭৮৭ জন। আইসোলেশন রয়েছেন ১৩৫ জন। আক্রান্ত ৩৩০ জনের মধ্যে ২৭৬ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
পিএ/এসই/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ