ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এ এক অদ্ভূত ঢাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২০
এ এক অদ্ভূত ঢাকা সুনসান রাজপথ। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাত সোয়া আটটা। রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে মিরপুর ১৪ এর উদ্দেশে যাত্রা শুরু। ১৮ দশমিক চার কিলোমিটারের এ পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা। আর রাত সোয়া ৯টায় মিরপুর ১৪ থেকে রওয়ানা হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আসতে সময় লেগেছে মাত্র ২৫ মিনিট। এ পথের দূরত্ব ১৬ দশমিক চার কিলোমিটার।

এ চিত্র বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতের। আধা ঘণ্টার বিরতিসহ মাত্র দেড় ঘণ্টায় ৩২ দশমিক আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া ঢাকা শহরে রীতিমতো স্বপ্নের।

কিন্তু এ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে।
 
মূল সড়কে জরুরি প্রয়োজনের যানবাহন ছাড়া আর কিছুই নেই। থেমে থেমে নজরে এসেছে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক। এর বাইরে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি। যার বেশিরভাগেরই মালিক চিকিৎসক অথবা গণমাধ্যমকর্মীদের। এর বাইরে অ্যাম্বুলেন্স, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়িও নজরে পড়েছে।

সুনসান রাজপথ।  ছবি: শাকিল আহমেদ
দীর্ঘ যাত্রাপথের বিভিন্ন জায়গায় থেমে দেখা যায়, এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগেই লকডাউন করেছে নিজ এলাকাকে। ওয়ারির র‌্যাংকিন স্ট্রিটে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়ার পর থেকেই লকডাউন করা হয়েছে এলাকাটি।
 
ওয়ারির থানার সামনে র‌্যাংকিন স্ট্রিটের প্রবেশপথটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সলিম মিয়া জানালেন, এলাকার বাসিন্দার বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সে সঙ্গে এলাকার মানুষদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
 
একই দৃশ্য নজরে পড়লো মিরপুর ১৪ নম্বরের পশ্চিম ইব্রাহীমপুরে আশিদাগের প্রবেশ মুখেও। সেখানেও এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে এলাকাটি লকডাউন করেছে।
সুনসান রাজপথ।  ছবি: শাকিল আহমেদ
এদের একজন শুভ জানালেন, আমরা এলাকার কিছু যুবক সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে মহল্লাটি লকডাউন করেছি। কারণ নিজেদের সচেতনতা নিজেদেরই করতে হবে।
 
প্রায় মিনিট পনের সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, এলাকার ভেতর থেকে কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে দুই জন পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করার সময় তাদের মোটরসাইকেলে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হয়। সে সঙ্গে সাবান দিয়ে ধোয়ানো হয় তাদের হাত।
 
এদিকে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) থেকে রাজধানী ঢাকায় দুপুর ২টার পর ওষুধের দোকান বাদে আর কোন দোকান খোলা না থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর প্রভাবে সন্ধ্যার পর ঢাকা কার্যত ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। মূল সড়কগুলো গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটির পর থেকেই ফাঁকা ছিল। মঙ্গলবার থেকে অলিগলিও বর্তমানে সুনসান। আগেই বর্ণিত দীর্ঘ পথে সব মিলিয়ে সড়কে ৫০ জন মানুষও নজরে পড়েনি।
 
অন্যদিকে, রাতের ঢাকায় এখনও অনিরাপদে রাস্তাতেই রয়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। সরেজমিনে হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ, কাওরানবাজারের সার্ক ফোয়ারা এলাকা ও ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একসঙ্গে অনেকে মিলে গল্প করছেন। তাদের প্রায় কারো মুখে ছিল না মাস্ক। সে সঙ্গে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও তাদের জানা নেই। ফলে গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে বসে তারা আড্ডা দিচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২০
ডিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।