দীর্ঘ ছুটি আর রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিবহন থাকায় চলে যান গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরই বাঁধে বিপত্তি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ৪ এপ্রিল কারখানার সুপারভাইজর তাকে ফোনে বলেন কাল (রোববার) কারখানা খুলবে, সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে হবে। চাকরি বাঁচাতে সন্তান নিয়ে কোথাও ইজিবাইক, কোথাও পিকআপ কখনও আবার হেঁটে ঢাকায় আসেন। সুযোগ বুঝে ছোট পরিবহনগুলো তিন গুণ বেশি ভাড়া দাবি করে।
এভাবে ঢাকায় এসে টাকা শেষ হয়েছে তার। কারখানাও বন্ধ, এখনও বেতন হয়নি, কবে হবে তাও জানেন না লিমা। বিমর্ষ অবস্থায় নিজ বাসাতেই বসে আছেন তিনি।
একই কথা জানান এ বস্তিতে বসবাস করা টাঙ্গাইলের হাসিনা, মরিয়ম, কিশোরগঞ্জের সুমন ও জামালপুরের হালিমা। পরিবহন না থাকায় ঢাকায় আসতেই সব টাকা শেষ হয়েছে তাদের।
তাদের বক্তব্য, কারখানা বন্ধ করলে আগেই বলতে পারতো, কেন ঢাকায় আনা হলো।
আছে ভিন্নচিত্রও
তবে অনেক কারখানার শ্রমিকরা আবার আগেই পেয়েছেন বেতন। পরিবারের সঙ্গে বেশ সুখেই কাটছে সময়। এমনই এক কন্যা সন্তানের মা মরিয়ম। অনেক আগেই তার স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছে। তিনি কাজ শুরু করেন ইটন ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসে। সপ্তাহে ছয় দিন অফিস করেন, কারখানায় কাজের চাপ বেশি হলে শুক্রবারও কাজ করতে। অবশ্য এজন্য ওভারটাইম পান তিনি।
এ সময়ে তার মা তার মেয়ের দেখাশোনা করেন। ঠিকমতো সন্তানকে সময় দেওয়া হয় না। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয় কারখানা। সেদিনই পুরো মাসের বেতন দিয়েছে ইটন ফ্যাশন। মাসের আগেই চাকরির টাকা আর সন্তানকে নিয়ে ভালো সময় কাটছে তার।
স্বপ্না কাজ করেন ওনার্স গার্মেন্টসে। তাদেরও গত ২৬ মার্চ থেকে ছুটি হয়েছে। এখন তিনি স্বামী-সন্তানকে সময় দিচ্ছেন। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সাহস না করে সারাক্ষণ পরিবারটির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগামী ৭ তারিখের মধ্যে আমাদের বেতন হয়ে যাবে।
অন্যদিকে যেসব কারখানা চালু আছে সেখানে রয়েছে পর্যাপ্তসংখ্যক স্যানিটাইজার, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি আর সচেতনতা বিষয়ে নানা দিকনিদের্শনাতো আছেই। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করাছেন সাব কন্ট্রাক্টের কারখানাগুলো। সেখানেও করোনারোধে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের বাসায় নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, কারখানা যতদিন বন্ধ থাকবে সময়টা আপনারা নিজ নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করুন, যথাসময়ে বেতন পাবেন।
বাসায় অবস্থানরত শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি শ্রমিক নেতাদের।
শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, মাঝপথে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়, বন্ধের চেয়ে চালু রাখা ভালো ছিল। শ্রমিকদের বাসায় একাধিক সদস্যের বসবাস, কার কাছ থেকে কে আক্রান্ত হবে বলা কঠিন। এখন সরকার, স্থানীয় সরকারের উচিত হবে শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো। আর আইনশৃংখলা বাহিনীর উচিত হবে সবাই যাতে বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে পারে এটার নিশ্চয়তা দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
ইএআর/এএ