ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনায় সিরাজগঞ্জে বেকার অর্ধলাখ নির্মাণ শ্রমিক

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২০
করোনায় সিরাজগঞ্জে বেকার অর্ধলাখ নির্মাণ শ্রমিক

সিরাজগঞ্জ: করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে অঘোষিত লকডাউনে সড়ক কিংবা ভবন নির্মাণসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পই বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব উন্নয়নকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বেকার বসে রয়েছেন। এদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কারও কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে পারছেন না। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন শ্রমজীবী এসব মানুষ। 

রোববার (০৫ এপ্রিল) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিবনাথপুর, পশ্চিম মোহনপুর, সারটিয়া ও রায়গঞ্জ উপজেলার পূর্ব মথুরাপুর এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের বর্তমান জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়।  

টাইলস শ্রমিক হিসেবে দিনে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা মজুরিতে কাজ করেন পূর্ব মথুরাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম (২৫)।

বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে তার সংসার। ১০ দিন ধরে কাজ না থাকায় ধার-কর্জ করে সংসার চালাচ্ছে তিনি।  

একই গ্রামের টাইলস শ্রমিক মোক্তার, বেলাল ও বাবুরও কাজ নেই। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। একই গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক এনামুল, আব্দুর রহিম, আলহাজ আলী ও জিহাদেরও কাজ নেই ১২ দিন ধরে। মাঝে মধ্যে কাজের সন্ধানে বের হলেও সাইট বন্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে।  

সদর উপজেলার শিবনাথপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক বাবু আলী। স্ত্রী, চার সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার সংসার। দৈনিক সাড়ে ৩শ টাকা মজুরিতে কাজ করতো তাই দিয়েই চলতো তার সংসার। দেড় সপ্তাহ ধরে কাজ না থাকায় সংসার চালাতে দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।  

একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল্লাহ ও শফিকুলও সংসার চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পশ্চিম মোহনপুর গ্রামের রাশিদুল ও রাব্বি কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।  

এসব নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, আমরা প্রতিদিনের কাজের মজুরি দিয়ে সংসার চালাই। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোনোমতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এরপর থেকে চালাতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন চললে পথে বসতে হবে আমাদের।  

শ্রমিকরা আরও বলেন, শুনেছি সরকার ঘরে ঘরে চাল-ডাল পৌঁছে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই কোনো সাহায্য পাইনি। কারও কাছে হাত পেতে চাইতেও লজ্জা লাগে। বাধ্য হয়ে চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

শিবনাথপুরের রাজমিস্ত্রির প্রধান ও সাব ঠিকাদার নজরুল ইসলাম বলেন, আগে আমার ৬টি সাইডে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করতো। বর্তমানে ৪টিই বন্ধ রয়েছে। ২টি সাইটে মাত্র ৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। অধিকাংশ শ্রমিকরাই বেকার ঘরে বসে রয়েছে। এভাবে কয়দিন চলবে তাও বুঝতে পারছি না।  

প্রশাসনের প্রতি বেকার দরিদ্র শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানান তিনি।  

জেলা ইমারত ও সড়ক নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় কার্ডধারী প্রায় ১৪ হাজার ও সহযোগী আরও ৮০ হাজারের মতো নির্মাণ শ্রমিক রয়েছে। বর্তমানে বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো একেবারেই বন্ধ রয়েছে। দু একটি ছোট ছোট ব্যক্তিগত ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। যেখানে দুই থেকে চারজন শ্রমিক কাজ করতে পারছেন। বাকি প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে ঘরে বসে রয়েছেন। এসব নির্মাণ শ্রমিকদের নামে কোনো বরাদ্দ এখনো আসেনি। তবে আমরা অতি দরিদ্র কিছু শ্রমিকের তালিকা করেছি। জেলা প্রশাসনের কাছে ওই তালিকা দেওয়া হবে।  

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। এখন পর্যন্ত জেলায় ৮৪৮ মেট্টিক টন চাল ও ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক, বাস শ্রমিক, ভাসমান চা-স্টলসহ করোনায় বেকার হয়ে পড়া পরিবারগুলোর তালিকা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা মোতাবেক চাল ও টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে কোনো হতদরিদ্র শ্রমিক বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণ সহায়তা পেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
আরএ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।