একইসঙ্গে করোনা ভাইরাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিসিক শিল্পনগরীস্থ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সুরক্ষায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, ঢাকা শিল্প নগরী শিল্প মালিক সমিতির (কেরানীগঞ্জ বিসিক) সভাপতি ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাভাবিক জীবন-যাপন থেকে শুরু করে ব্যবসা, বাণিজ্য, আমদানি, রপ্তানি, শিল্পোৎপাদনসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ছে। ফলে বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধীন ৭৬টি শিল্প এলাকার প্রতিটি কারখানা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট এ শিল্পগুলো আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অর্থনীতি সুরক্ষায় শিল্প রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় বাজারের যোগান, আমদানি-বিকল্প পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে চলমান দুঃসময়ের হাত থেকে রক্ষায় সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহ মূলত স্থানীয় বাজার নির্ভর। কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন, স্থানীয় বাজারে বিপণন, সরবরাহ, রপ্তানি কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কিছুদিন পর শ্রমিকদের বেতন, বোনাস দেয়া শিল্প মালিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে হোসেন এ সিকদার জানান, দেশের সব বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহে দক্ষ, অর্ধ-দক্ষ, অদক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার ৬২০ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত আছেন। আর এসব শিল্প কল-কারখানায় শিল্প মালিকদের প্রায় ২৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশব্যাপী অঘোষিত লকডাউন থাকায় বিসিক শিল্প এলাকায় বর্তমানে সব উৎপাদনমুখী কল-কারখানা বন্ধ রয়েছে। যার ফলে এ বিশাল অংকের বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
এজন্য বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসমূহের পানির বিল আগামী ছয় মাস মওকুফ এবং প্রতি মাসের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরবর্তী ছয় মাস তিনটি সম-বিভাজিত কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানান তিনি। একইসঙ্গে বিসিকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি শিল্প প্লটের নির্ধারিত একটি সার্ভিস চার্জ রয়েছে যা তিনি আগামী এক বছরের জন্য মওকুফ ও বিসিক শিল্প নগরীর অন্তর্ভুক্ত প্লটের কিস্তি আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত রাখতে সরকারের কাছে আবেদন জানান।
তিনি আরও বলেন, শিল্প উদ্যোক্তাদের এ বছরের আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যেন আগামী তিন বছরে সমান তিনটি কিস্তিতে সমন্বয়ের মাধ্যমে জরিমানা ছাড়া দিতে পারে সে বিষয়ে সরকারের বিশেষ বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরীতে স্থাপিত নতুন শিল্প কারখানা এবং বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার এবং প্রতিস্থাপন) শিল্প ইউনিটের মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য গৃহিত ঋণসহ অন্যান্য ঋণের সুদ আগামী ছয় মাসের জন্য মওকুফ করতে হবে।
শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, মোড়ক সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ কর অবকাশ ও শুল্ক রেয়াতের আহ্বান জানিয়ে হোসেন এ সিকদার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি, তাই সরকারকে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
জিসিজি/আরবি/