ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অভিবাসীর পরিবারকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ রামরু’র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
অভিবাসীর পরিবারকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ রামরু’র অভিবাসী

ঢাকা : করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী শিল্পেরমতো বিদেশে কর্মহীন অভিবাসীদের পরিবারকে সহায়তার জন্য একটি তহবিল গঠনসহ একাধিক সুপারিশ করেছে শরণার্থী ও অভিবাসী আন্দোলন গবেষণা ইউনিট (রামরু)। 

একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে বিনা খরচে কভিড-১৯ পরীক্ষা, বিনাসুদে ঋণ ও ক্ষেত্রে বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা এবং খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শনিবার (০৪ এপ্রিল) কভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুরক্ষা শীর্ষক এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড.তাসনিম সিদ্দিকী।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকী বলেছেন, করোনা ভাইরাস স্মরণাতীতকালে মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে এক একটি খাত ধরে ধরে নির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অভিবাসন খাতের চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কিছু উপায় আমরা এখানে তুলে ধরেছি। ইতোমধ্যে সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে সেটা প্রশংসনীয়। একই ভাবে বিদেশে কর্মহীন অভিবাসীদের পরিবারের জন্য বিনাসুদে ঋণ ও ক্ষেত্র বিশেষ অনুদানের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ঘোষণা করেছে যে নিয়মিত ও অনিয়মিত সকল অভিবাসীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।   তবে যেসব দেশ এখনও অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিনা খরচে কভিড -১৯ টেস্টিং এবং চিকিৎসা নিয়ে আসেনি তাদের অবিলম্বে এই জাতীয় সুবিধা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা উচিত৷ একই সঙ্গে এই দেশগুলোকে বোঝাতে হবে যে এই সঙ্কটের সময়ে তাদের নাগরিক এবং অভিবাসীদের মধ্যে পার্থক্য আঁকাই বাস্তবে দেশগুলির জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকে বিপন্ন করবে।
বিদেশি দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো তাদের সীমিত সস্পদ দিয়ে অভিবাসীদের সেবা প্রদানের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের দূর্দশা সরকারকে  জানাচ্ছেন এবং খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেও নিয়েছে।  

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে একই স্থানে বহু সংখ্যক অভিবাসী কর্মী গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে। সেখানে ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। তাদের সুরক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেই সঙ্গে তারা নিজেরা কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তা দূতাবাসগুলোকে বাংলা ভাষায় অবহিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সব অভিবাসী কর্মী গ্রহণকারী দেশের স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্য জরুরি সেবায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের যথাযথ মাস্ক এবং বিধিসম্মত পোশাকসহ সুরক্ষার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বায়রা এবং রিক্রুটিং এজেন্সির করণীয়

জরুরি ভিত্তিতে বায়রার উচিত তার সদস্যদের কাছে থেকে চাঁদা নিয়ে একটি তহবিল গঠন করা। সেই তহবিল হতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছে, টাকা পরিশোধ করেছে কিন্তু যেতে পারেনি এমন পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। তাছাড়া এখনো যাদের কাগজ প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়নি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে করোনা সংকট শেষ হলে যাদের নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়েছিল তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নতুন কোনো খরচ যুক্ত না করে বিদেশে যাবার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশন এবং মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা দেবে।
এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের দ্বারা প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের বিষয়ে একটি ডাটাবেস প্রস্তুত করা, বিভিন্ন সংস্থাকে রেমিট্যান্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাখার আহ্বান জানানো করোনাভাইরাস সঙ্কটের পরে রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্রমবর্ধমান উৎসাহের বিষয়টি বিবেচনা করা।  
রামরু দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশি অভিবাসীদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিএসসি নার্সিং কোর্স চালু করা, ল্যাব টেকনিশিয়ান কোর্স চালু এবং প্রযুক্তিগত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং প্রযুক্তিগত অন্যান্য মেডিকেল সম্পর্কিত কোর্সসহ বেশ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ রেখেছে।  
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৬-৭ লাখ নারী এবং পুরুষ কর্মের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেন। শ্রম অভিবাসীদের পাশাপাশি ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে একটি বড় সংখ্যার বাংলাদেশি-বংশদ্ভুত নারী ও পুরুষ (ডায়াসপোরা) স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে এই দু’ধরনের অভিবাসীরাই গভীর সংকটের পড়েছেন এবং উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী আটকা পড়েছেন। যাদের বৈধ ভিসা নেই এমন দীর্ঘমেয়াদী অভিবাসীরা কাজ এবং আয়ের অভাবে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে মারা গেছেন প্রায় ৮০ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৭ ঘন্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০ 
জিসিজি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।