ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কেউ বাদাম কিনছে না, খাবো কি?

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
কেউ বাদাম কিনছে না, খাবো কি?

মাগুরা: লকডাউন কি জানে না। করোনা ভাইরাস কি? তাও ঠিকমত জানে না সে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনের মতো বাদাম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েছে। চারিদিকে সুনশান নিরবতা। কোথাও নেই মানুষ। সব জায়গা ফাঁকা। 

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। চৈত্রের খরতপ্ত দিনে গাঁ দিয়ে ঘাম ঝরছে অঝরে।

আর মুখ দিয়ে হাক দিচ্ছে ভাই বাদাম নিবেন, বাদাম, প্রতি প্যাকেট ৫ টাকা। কত টাকা বিক্রি হয়েছে? প্রশ্ন শুনে বলে, আজ এক টাকাও বিক্রি হয়নি। কেউ বাদাম কিনছে না ভাই, খাবো কি? এইভাবে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিল বাদাম বিক্রেতা সুজন শিকদার। ছোট বেলা থেকেই সে প্রতিবন্ধী। মাগুরা জেলার নবগঙ্গা নদীর কোল ঘেষা পৌরসভার পারনান্দুয়ালী গ্রামের বাসিন্দা সে।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

সুজন শিকদার জানায়, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে তিন বেলা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। আগে যখন শহরে বাদাম বিক্রি করতে আসতাম তখন ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হতো। বর্তমানে কেউ বাদাম কেনে না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।

সুজন আরও জানায়, আমি ভ্যান গাড়ি ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না। মাঝে মধ্যে পায়ের হাটুতে ব্যথা হয়। বাইরে বের হতে পারি না। ত্রাণ পেয়েছো কিনা? প্রশ্ন করলে সে বলে, আমি পাইনি। কোথায় ত্রাণ দেয় আমি তো জানি না।

মাগুরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাকিব আল সাহান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে প্রায় ৮’শ পরিবার রয়েছে। এদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা চাল, ডাল, তেল, আলু দেওয়া হচ্ছে। প্রতি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল, ডাল, আলু, তেল বরাদ্দ রয়েছে। একটা তালিকা তৈরি করে তাদের সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। যারা এখনও পায়নি তাদের ঘরে আমরা খাবার পৌচ্ছে দিবো।  

মাগুরা নতুনবাজার এলাকার রাজ মিস্ত্রী বিষ্ণু অধিকারী বলেন, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কাজ করতে যেতে পারিনা। কাজ নেই। ঘরে যে চাল ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। দু’মুঠো ভাতের যোগাড় করতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।

মাগুরার পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের পৌরসভার প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ কেউ না খেয়ে থাকবে না। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। আমরা তালিকা করে ওয়ার্ড ভিত্তিক জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে থাকবো। আমরা সবাই মিলে একসাথে করোনা যুদ্ধকে জয় করবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।