ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে শ্রমজীবীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে শ্রমজীবীরা

সাভার (ঢাকা): প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারির রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও রীতিমত এ ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। এ রোগটি বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পরপরই সরকার সব সরকারি-বেসরকারি দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

এ কারণে নানা পেশার শ্রমজীবীসহ দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। কোনো কাজ নেই উপার্জনও নেই বলে শ্রমজীবী মানুষগুলো আতঙ্কে রয়েছেন।

টাকা থাকুক আর না থাকুক মাস শেষে বাসা ভাড়া দিতেই হবে।

সফিকুল ইসলাম আশুলিয়ার পলাশবাড়ীর স্টুডিও ব্যবসায়ী। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে বাসা ভাড়া, পুরো মাসের বাজার, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ কোনোরকম চলে যায়। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করায় তিনি পড়েছেন চরম বিপদে। দোকান বন্ধ থাকায় তার কোনো রোজগার নেই প্রতিদিনের বাজারও করতে হচ্ছে তাকে। জমানো টাকায় বাজার করে শেষের দিকে বাসা ভাড়া দেওয়ার মত টাকা নেই।

সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানের পাশে একটি বাড়িতে ২ হাজার ৫০০ টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকি। ৪ সদস্যের সংসারে প্রতিদিন বাজার করতে হয়। বাসায় প্রায় ৮ দিন ধরে বসে আছি কোনো রোজগার নেই। সামনের দিনগুলোতে খাবো কি? আর বাসা ভাড়াই দেবো কি?

অন্যদিকে আশুলিয়ার কুমকুমারি এলাকার রিকশাচালক মালেক নুরজান ভিলা নামক একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ৯, ১০ দিন থেকে রাস্তায় রিকশা চলতে দেয় না। আগে তাও রিকশা চালিয়ে সারাদিনে কম বেশি আয় করতাম। দেশে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ঘরে বসে দিন পার করছি। জমানো টাকা দিয়ে কোনো রকম ডাল-ভাত খাওয়া চলছে। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া কি করে দেবো?

বাড়িটির আরেক ভাড়াটিয়া পোশাক শ্রমিক নারগিস বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনেছি কারখানা ছুটির সঙ্গে সঙ্গে নাকি আমাদের বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু ছুটির প্রায় ৭ দিন হতে চলল কিন্তু বেতনের কোনো খোঁজ খবর নেই। বাজার করতে পারছি না। আর ত্রাণ তো শুধু দুস্থরা ও নেতাদের পছন্দের লোকরা পাচ্ছে। দুইদিন পর বাসা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালাও বলবে। আমরা এখন কি করবো।

এদিকে কিছু কিছু বাড়িওয়ালা আছেন যারা শুধুমাত্র বাড়িভাড়ার ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে সাভার আশুলিয়ার কিছু বাড়িওয়ালা এক মাসের জন্য বাড়িভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। আবার কিছু কিছু বাড়িওয়ালা বলছেন, বিদুৎ বিল ও গ্যাস বিল মওকুফ করলে তারা বাড়িভাড়া মওকুফ করতে পারবেন।

নুরজাহান ভিলার মালিক নুরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে সবাইকে তো চলতে হবে। সরকার যদি বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল মওকুফ করে দেন তাহলে সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। তবে তিন মাসের ভাড়া পুরোপুরিভাবে মওকুফ না করে কিছু মওকুফ করা হলে আমরাও বাঁচতে পারবো। নয়তো আমাদেরও না খেয়ে মরতে হবে।

এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িওয়ালাদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের ভাড়া মওকুফ করে দিতে আহ্বান করা হয়েছে। আমরা বাড়িওয়ালাদের জন্য বলেছি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ট্যাক্স তিন মাসের জন্য মওকুফ করা উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যারা ধনী, বিত্তবান তাদের বাড়ির ভাড়াগুলো নিয়ে আলোচনায় বসবো। বাড়িভাড়ার আন্দোলনটি আমার চাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান থেকে যেনো এটা বাস্তবায়ন হয়। তাহলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া দু'পক্ষই বাঁচবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।