ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চিড়িয়াখানার ৪ হরিণ গেলো ক্ষুধার্থ কুকুরের পেটে!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
চিড়িয়াখানার ৪ হরিণ গেলো ক্ষুধার্থ কুকুরের পেটে! .

রাজশাহী: রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় পাঁচটি ক্ষুধার্থ কুকুর ঢুকে চারটি হরিণ খেয়ে ফেলেছে।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিকেলে বিষয়টি জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম দাবি করেন- তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না। পরে মধু নামের এক ব্যক্তি চিড়িয়াখানার পশুর পরিচর্যকারী বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় তার কোনো দোষ নেই। মধুর স্বীকারোক্তির পর সুপারভাইজার শরীফুল ইসলামও এ ঘটনা স্বীকার করেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি শাবক জন্ম নিয়েছে। নেড়ি কুকুরের দল ঢোকার সময় সেডে মোট হরিণ ছিল ৭৫টি। কুকুর খাওয়ার পর বর্তমানে হরিণের সংখ্যা ৭১টি। কুকুরের খাওয়া চার হরিণের তিনটিই শাবক। একটি তাদের মা।

হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ সেডের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে। জায়গাটি এখনও উঁচু হয়ে আছে। চিড়িয়াখানাটিতে বেশ কিছু জমি নিয়ে হরিণের সেড করা হয়েছে। এর ভেতর টিন দিয়ে তৈরি দু’টি ঘর রয়েছে। হরিণগুলো সেখানে পানি ও খাবার খায়। ছায়ায় বিশ্রাম করে। বাকি অংশটুকু হরিণের বিচরণের জন্য ফাঁকা পড়ে আছে। চারপাশে আছে লোহা ও কাঁটাতারের বেড়া।

অভিযোগ রয়েছে- চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই সেডের ভেতর চারটি হরিণ নির্মমভাবে কুকুরের পেটে গেছে।

এ নিয়ে কথা বলতে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি চিড়িয়াখানা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পরে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনা একটি দুর্ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ চলেছে। লোকজনও ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট। তাই পাঁচটি নেড়ি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়েছিল। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের সেডে ঢুকতে পেরেছিল।

তাদের ধারণা- ক্ষুধার্থ কুকুরগুলো প্রথমে শাবকগুলোর ওপর হামলা করে। শাবকগুলোকে বাঁচাতে গিয়ে মা হরিণটিও মারা যায়। কুকুরগুলো চারটি হরিণের দেহের অংশ খেয়ে ফেলেছিল। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা ভেতরে পাঁচটি কুকুর ও চারটি হরিণের দেহের অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। আর সেডের মধ্যে থাকা হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দেন কর্মীরা।

এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে লিখিত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দেবেন। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।