মানুষ এতই সরল বা বোকা নয় যে কোনো সংবাদের তথ্য-উপাত্ত ও যথার্থতা পরীক্ষা না করেই সে সংবাদ ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করবে। মানুষ স্বভাবতই কোনো সংবাদ গ্রহণে যাচাই-বাছাই করে।
সুতরাং অসতর্কতা নয়, বরং এক প্রকার ঠাট্টা-মশকরার জন্যই মানুষ এ ধরনের সংবাদ প্রচার করে।
বাংলাদেশও এ ধরনের গুজব ও ভুয়া সংবাদের জাল থেকে মুক্ত নয়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার বাড়ি ভাড়া মওকুফ, ব্যাংক লোন ও বিদ্যুৎ বিল তিন মাসের জন্য স্থগিত এবং সব অফিস-আদালত এক মাসের জন্য ছুটি ঘোষণা করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সরকার এ সংবাদের প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
পড়ুন>> বাড়ি ভাড়া মওকুফ, লোন-বিল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার
ঠাট্টা-মশকরা করে প্রকাশ করা এ সংবাদে বিশ্বাস করে কোনো মানুষ যদি মিথ্যা আশায় তার সীমাবদ্ধ আয় অন্য জরুরি কাজে খরচ করে, তবে তার বাড়ি ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় অর্থ পেতো না। ফলে হয়তোবা সংকটময় এ সময়ে তার ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন অথবা বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে বাড়িওয়ালার সঙ্গে তিক্ততায় পরিণতিতে বাড়ি ছাড়তে হতো।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপর একটি সংবাদ প্রচার করা হচ্ছিল, সরকারি ত্রাণ শুধু সামরিক বাহিনীই বিতরণ করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল (শুক্রবার) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকার এ সংবাদকে বানোয়াট সংবাদ হিসেবে জানায়।
পড়ুন>> ত্রাণ শুধু সেনাবাহিনী বিতরণ করবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার
ঠাট্টা-মশকরা করে প্রকাশ করা এ সংবাদগুলোও আরও ভয়াবহ হতে পারে। ক’দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল, মাছের ট্যাংকার পরিষ্কার করা এক ওষুধ সেবন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে পারে। এ ওষুধে ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা রাসায়নিক উপাদান ক্লোরোকুইন রয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে কেউ কেউ একে করোনা প্রতিরোধে মহৌষধ হিসেবে প্রচার করে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমেরিকান এক ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ ওষুধটি সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষে ওই ব্যক্তি মারা যান।
শুধু ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশিত এক সংবাদ বিশ্বাস করে ওষুধটি সেবন করে এক ব্যক্তি প্রাণ হারালেন। যারা ঠাট্টা-মশকরা করে এ সংবাদ প্রকাশ করেছেন, তারা কী এই মৃত্যুর দায় নেবেন?
একইসঙ্গে চীনা গবেষণাগারেই তৈরি হোক বা আমেরিকান গবেষণাগারে, সতর্ক না থাকলে যে কেউই করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস তৈরির এ সংবাদ তাতে কোনো তফাত তৈরি করে না।
কোনো সেলিব্রেটি যদি সত্যিই ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হোন, তাতে করে ভক্তরা হয়তো ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ওই সেলিব্রেটির সংস্পর্শে যাওয়া থেকে দূরে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সংবাদটি ভুয়া হয়, তবে একজন লোককে শুধু শুধু হয়রানির দায় নিতে হয় ওই সংবাদ প্রচারকারীদের।
সুতরাং, এ ধরণের ভুয়া সংবাদ বা গুজবে মনোযোগ না দিয়ে একমাত্র সতর্কতার মধ্য দিয়েই আমরা করোনার ভাইরাস সংক্রমণের এ সংকটকে কাটিয়ে উঠতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
এবি