ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

শ্রমিকদের সময় কাটছে সংসার-সন্তান নিয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:০১, এপ্রিল ২, ২০২০
শ্রমিকদের সময় কাটছে সংসার-সন্তান নিয়ে শ্রমিক।

ঢাকা: এক কন্যা সন্তানের মা মরিয়ম। অনেক আগেই তার স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি কাজ শুরু করেন ইটন ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টসে। সপ্তাহে ছয় দিন অফিস করেন, কারখানায় কাজের চাপ বেশি হলে শুক্রবারও কাজ করতে হয়। অবশ্যই এজন্য ওভারটাইম পেয়ে থাকেন তিনি। এ সময়ে তার মা তার মেয়ের দেখাশোনা করেন।

ঠিকমতো সন্তানকে সময় দেওয়া হয় না। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয় কারখানা।

সেদিনই পুরো মাসের বেতন দিয়েছে ইটন ফ্যাশন। মাসের আগেই চাকরির টাকা আর সন্তানকে নিয়ে ভালো সময় কাটছে তার।

স্বপ্না কাজ করেন ওনার্স গার্মেন্টসে। তাদেরও গত ২৬ মার্চ থেকে ছুটি হয়েছে। এখন তিনি স্বামী-সন্তানকে সময় দিচ্ছেন। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সাহস না করে সারাক্ষণ পরিবারটির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগামী ৭ তারিখের মধ্যে আমাদের বেতন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে যেসব কারখানা চালু আছে সেখানে রয়েছে পর্যাপ্তসংখ্যক স্যানিটাইজার, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি আর সচেতন বিষয়ে নানা দিকনিদের্শনাতো আছেই। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন সাব কন্ট্রাক্টের কারখানাগুলো। সেখানেও করোনারোধে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের বাসায় নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আর বাসায় অবস্থানরত শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি শ্রমিক নেতাদের।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দিনগত রাতে এক বার্তায় শ্রমিকদের সুরক্ষায় পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান। এর পরদিন অবশ্য সব কারখানা আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে বিকেএমইএ।

ড. রুবানা হক সরকারের সাধারণ ছুটির সময়ে কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেউ চাইলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন। পিপিই ও মাস্ক তৈরি হচ্ছে এমন কারখানাগুলো খোলা থাকবে। খোলা রাখা কারখানাগুলোকে শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিকদের সব দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। '

আর বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, সবার মাঝে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা আমার শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবো। আমি বাসায় থেকে কারখানা চালাবো আর শ্রমিক এ অবস্থায় কারখানায় কাজ করবে এটা হয়না। আমার অর্ডার বন্ধ হয়ে আছে এ অবস্থায় কেনো শ্রমিককে কারখানায় যেতে হবে। রাস্তায় একটা আতঙ্কের মধ্যে কারখানায় যাচ্ছে তারা এটা হয় না। এজন্য আমরা কি সদস্যভুক্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছি।

এদিকে বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের পুরো সময় কাটছে পরিবার আর সন্তান নিয়ে।

এ বিষয়ে কারখানা শ্রমিক মরিয়ম বাংলানিউজকে বলেন, আমার সন্তানের এখন ৬ বছর। সে স্কুলে যায়। এখন মেয়ের স্কুল বন্ধ আমার কারখানাও ছুটি চলছে। আমাদের কারখানা আমাদের বেতন আগেই দিয়ে দিয়েছে। খুব আনন্দের সঙ্গে সময় কাটছে যা বলে বোঝাতে পারবো না। তবে আমার সহকর্মী ও অফিসের বসদের খুব মিস করছি।

একই কথা জানান স্বপ্না। তিনি বলেন, ছুটির এ সময় আমি নষ্ট করতে চা্ই না। পুরো সময় পরিবারকে দিতে চাই। তবে খুব কষ্ট লাগে জানি না এ দুর্যোগ কবে শেষ হবে। একদিকে ছুটির আনন্দ অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের ভয় বাসা বাঁধছে। আল্লাহ এ বিপদ থেকে রক্ষা করো।

এদিকে বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের বাসায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি শ্রমিক নেতারা।

বিকেএমহএ সভাপতি সেলিম ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা বন্ধ ঘোষণা করেছি। এখন শ্রমিকদের আহ্বান জানাবো তারা যেনো নিজ নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করে।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার লকডাউন করেছে সবার উচিত ছিলো সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া। মাঝপথে কারখানা বন্ধের চেয়ে চালু রাখা ভালো ছিলো। শ্রমিকদের বাসায় একাধিক সদস্যের বসবাস কার কাছ থেকে কে আক্রান্ত হবে বলা কঠিন।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু বিকেএমইএ তাদের কারখানা বন্ধ করেছে এখন সরকার, স্থানীয় সরকারের উচিত হবে শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো। আর আইনশৃংখলা বাহিনীর উচিত হবে সবাই যাতে বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে পারে এটার নিশ্চয়তা দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২০
ইএআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।