ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দিন যত যাচ্ছে বাড়ছে অসহায় মানুষের দুর্ভোগ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২০
দিন যত যাচ্ছে বাড়ছে অসহায় মানুষের দুর্ভোগ

ঢাকা: রাজধানীর কাকরাইল এলাকা। দুপুরের পড়ন্ত রোদে বেশ কয়েক রিকশাচালক আর অসহায় মানুষের ভিড় জমেছে ফুটপাতে। স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে ত্রাণসামগ্রী। একপর্যায়ে তা পুরোপুরি দেওয়া হলো। শুরু হলো কাড়াকাড়ি! শেষপর্যন্ত একটা ব্যাগ নিয়ে ১০ থেকে ১২ জনের টানাটানি। ব্যাগ থেকে তেলের বোতলটা বের করে একজন চলে গেলেন দূরে। বাকি যারা ছিলের, তাদের টানাটানিতে চাল আর ডালের প্যাকেট ছিঁড়ে সবগুলো পড়লো রাস্তায়।

বুধবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনা শেষে ত্রাণ নিয়ে টানাটানি করা মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, ত্রাণের চেয়ে মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই তো এতো চাহিদা! এদিকে, সবকিছু বন্ধ থাকায় পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজেরা যে কিছু করবে, তারও উপায় নেই।

তাই দিন যত গড়াচ্ছে, দুর্ভোগ আরও বেশি হচ্ছে অসহায় এই মানুষগুলোর।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আগের ছুটির সঙ্গে আরও ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকবে। তবে এই ছুটি যত বাড়বে, অসহায় মানুষদের দুর্ভোগ ততই বাড়ছে বলে মন্তব্য সাধারণ মানুষের।

দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন সাখাওয়াত মিয়া। কিন্তু এই বন্ধের মধ্যেও রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। কথা হলে আক্ষেপের সুরে সাখাওয়াত বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ এসে বললো জানিস না এখন শুধু বাজার করার জন্য বের হওয়ার অনুমতি আছে! কিন্তু তারা তো বোঝে না, রিকশার প্যাডেল না ঘুরাইলে আমাগো মতো মানুষের বাজারে যাওয়ার উপায় নাই।

তিনি বলেন, সকাল থেকে ১০০ টাকার ভাড়াও মারি নাই। সব খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় সকাল থেকে শুধু কলা আর পাউরুটি খেয়ে আছি। এখন যে রিকশা সারাবো, তার উপায়ও নাই। না আছে টাকা, না আছে মিস্ত্রির দোকান খোলা। মহাজনকেও যে আজ কীভাবে টাকা দেব জানি না। আবার না-কি ছুটি বাড়ছে। এই ছুটি আমাগো পেটে যেন লাথি মারার মতো।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে এখন সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে অনেকগুণ। প্রায় প্রতিটি সড়কেই একটু সাহায্যের আশায় বসে বসে ক্ষণ গুনছে অসহায় এই মানুষগুলো। কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের আয় রোজগার সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও এর একটি বস্তির বাসিন্দা সায়রা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভলেপমেন্ট করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে। কিশোরী মেয়ে আর ছোট্ট নাতিকে নিয়ে ফুটপাতে ঘুরছিলেন ত্রাণের আশায়।

দুঃখ করে সায়রা খাতুন বলেন, কোনোদিন ভাবি নাই বাবা এভাবে পথে পথে ঘুরতে হবে সাহায্যের জন্য। স্বামীর একটা চায়ের দোকান আছে আর সন্তান আমার রিকশা চালায়। সে কাজের ভেতর দিয়েই যা ইনকাম, আমাদের সংসার চলে যায়। কিন্তু এই বন্ধে সব শেষ। বাড়ির বৌডা অসুস্থ, ওষুধ আর বাজারে সব জিনিসের দামও বাড়ছে। কোনো জমানো টাকাও নাই। এমন দুঃসময়ে দোকানডাও বন্ধ আবার ছেলের ইনকামও নাই আগের মতো। শেষে বাধ্য হয়ে পথে নামছি সাহায্যের আশায়।

শুধু এই মানুষগুলোই নয়, বর্তমানে দেশে কার্যত লকাডাউন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রায় সব জনগণই। তবে এই অসহায় মানুষগুলোর দুর্ভোগ একটু বেশিই। তাই তো একদিকে যেমন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে মানতে হচ্ছে স্যোসাল ডিসটেন্স, ঠিক তেমনি জীবন বাঁচাতেই ছুটি বাড়ানোয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অসহায় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর দুর্ভোগ।

আরও পড়ুন>> দোকান মালিক সমিতির ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি-মারামারি

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ