ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাগুরা সদর হাসপাতালে বেড পড়ে আছে, নেই রোগী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২০
মাগুরা সদর হাসপাতালে বেড পড়ে আছে, নেই রোগী

মাগুরা: করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ সব খানেই কমেছে রোগীর সংখ্যা। আগে যেখানে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো এখন সেখানে হাসপাতালের বেশিরভাগ বেড খালি পড়ে আছে।

বুধবার (১ এপ্রিল) জেলা সদরের এই হাসপাতালে মার্চের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় বহির্বিভাগে রোগী কমেছে ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ। অন্তর্বিভাগে আগের তুলনায় ভর্তি নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সময়ে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীই বেশি আসে। তাদের যেহেতু বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এই কারণেই কমেছে রোগীর সংখ্যা।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বহির্বিভাগে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন ২১১ জন। গত ৮ মার্চ প্রথম যেদিন বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয় সেদিন এই সংখ্যা ছিল ১৩৬৭ জন। ১৯ দিনের ব্যবধানে রোগী নেমে এসেছে ছয় ভাগের এক ভাগে। অন্যদিকে সোমবার হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬১ জন। ৮ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১৬৬ জন।

চিকিৎসক ও সেবিকারা জানিয়েছেন, মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নাম হলেও এখানে ২৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুমোদিত হয়নি। ফলে জনবল ও সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে এটি এখনো ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল। তারা জানিয়েছেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রোগী থাকে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির ভয়ে এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে একশোর নিচে। চিকিৎসক ও সেবিকারা বলছেন, পারতো পক্ষে কেউ হাসপাতালে থাকতে চাইছেন না। প্রতিটি ওয়ার্ডে অর্ধেক বা তারও বেশি বেড খালি পড়ে আছে। শহরেই বাসা এমন অনেক রোগী আছেন যারা ভর্তি হয়ে আবার ছাড়পত্র নিয়ে নিচ্ছেন।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশু ওয়ার্ডে কমেছে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও। বুধবার হাসপাতালের শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টায় চার শিশু ভর্তি হয়েছে। আগের রোগী মিলিয়ে এদিন দুপুরে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ জন। এর মধ্যে মাত্র দুইটি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এক সপ্তাহ আগে গত ২১ মার্চ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯। শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরির আগে ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ রোগী ভর্তি থাকতো।

তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্র জানায়, মাগুরা জেলা সদর হাসপাতালে ২৯ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এখানে আছেন ১৭ জন চিকিৎসক। আর মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ডেপুটেশন বাদে ৮৪ জন সেবিকার মধ্যে হাসপাতালে কর্মরত আছেন ৭৬ জন।

একই চিত্র দেখা গেছে  শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। সেখানেও চিকিৎসা নেওয়া মানুষের সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। অন্য সময় যেখানে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো এখন সেখানে হাসপাতালের বেশিরভাগ বিছানা খালি পড়ে আছে।

শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালগুলোর অন্তর্বিভাগে ভর্তি ছিল যথাক্রমে ১৪, ১১ ও ২০ জন রোগী। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরির আগে যেখানে দৈনিক ভর্তি থাকতো ৩০ থেকে ৬০ জন রোগী। একই পরিস্থিতি বহির্বিভাগেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  শ্রীপুরে ৪৫, শালিখায় ৫৬ এবং মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন ৯৫ জন। স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতাল গুলোতে দিনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন ১০০ থেকে ২৮০ জন রোগী।

রোগী কমে যাওয়ার বিষয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন কুমার কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, রোগী কমার প্রথম কারণ হচ্ছে, এ সময়ে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ফ্লু রোগী বেশি আসতো। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় এ ধরণের রোগীকে মোবাইলে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে, আর ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন যে রোগী আসতো তার অর্ধেকের বেশি আসতো ওষুধ নিতে। এখন তারা আসছেন না বলে স্বাভাবিকভাবেই রোগী কমে গেছে। এছাড়া, রোগী কমে যাওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষের সচেতনতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।