ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেনা কর্মকর্তার ব্যবহারে ‘মুগ্ধ’ রিকশাচালক

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
সেনা কর্মকর্তার ব্যবহারে ‘মুগ্ধ’ রিকশাচালক করোনা নিয়ে রিকশাচালকে সচেতন করছেন লে. কর্নেল আসিফ আমিন। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: তখন দুপুর ১২টা বাজে। চৈত্রের খরতাপ, ফেনী শহরের ট্রাংক রোড এলাকায় জনসমাগম তেমন নেই। একপাশে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের জটলা। সড়কে দাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছিলেন সেনা সদস্যরা। শহরের ট্রাংক রোডের খেঁজুর চত্বর থেকে দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে রিকশা চালিয়ে আসছিলেন বয়স ৮০ ছুইঁ ছুইঁ এক রিকশাচালক। সেনা সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভয়ে তিনি যেন থমকে দাঁড়িয়ে যেতে চাইলেন।

দোয়েলের ভাস্কর্যটির নিচে দাঁড়িয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস ২৮ মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারি অধিনায়ক লে. কর্নেল আসিফ আজমিন রিকশাচালককে ডাকলেন, এরপর নিজেই কাছে গেলেন।

গিয়ে ‘বললেন, ‘বাবা-জানেনতো দেশে করোনার সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে সবাই শঙ্কিত, মাস্ক ছাড়া কেন বের হয়েছেন।

জবাবে রিকশাচালক বললেন, বাবা পেটে ভাত নাই খামু (খাব) কি? পেটের দায়ে বের হয়েছি।

আসিফ আজমিন রিকশাচালককে একটি মাস্ক এবং একটি স্যাভলন সাবান দিলেন, আর বললেন, বাবা- মাস্কটা মুখে লাগাবেন, আর সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।

সেনাবাহিনীর এমন নম্র আচরণ দেখে বৃদ্ধ রিকশাচালকটি মুগ্ধ হয়ে যায়। মুগ্ধ হয়ে যায় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরাও। দেশে করোনা পরিস্থিতি বিস্তার রোধে গত কয়েকদিন মাঠে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা হরহামেশাই দেখছি সেনাবাহিনীর কঠোরতার চিত্র। এমন বিনয়ী আচরণ হয়তো সেখানে উঠে আসে না।

কর্তব্যরত সেনা কর্মকর্তা আসিফ আজমিন বলেন, আমরা জনগণকে ভালবাসা দিয়ে, তাদের সহযোগিতা নিয়ে মাঠে কাজ করতে চাই। আমরা চাই মানুষ সচেতন হয়ে নিজেকে এবং তার পরিবারসহ দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখুক।

করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফেনীতে একাধিক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী।

রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে শহরের ট্রাংকরোড জিরোপয়েন্টে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন সেনাসদস্যরা।

সেনাবাহিনীর কার্যক্রম প্রসঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাস ২৮ মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারি অধিনায়ক লে. কর্নেল আসিফ আজমিন বলেন, সরকার ঘোষিত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটিতে হোম কোয়ারেন্টিন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আমরা সেনা টহল পরিচালনা করেছি। এ সিদ্ধান্ত মানতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছি, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষকে মাস্ক বিতরণ করেছি, হাত ধোয়ার জন্য সাবান দিয়েছি। একইসঙ্গে রাস্তায় ও যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি।

লে. কর্নেল আসিফ আমিন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মানুষকে সতর্কভাবে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।

তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা কঠোরভাবে কাজ করবো। আমরা, জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনী একত্রিত হয়ে কাজ করছি।

এর আগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলায় টহল দেয়। এ সময় নিম্নআয়ের মানুষদের মাস্ক ও সাবান বিতরণ করে। রাস্তায় তরল জীবাণুনাশক ছিটায়।

সেনাবাহিনীর টহল জনসমাগম কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করছে। সবাইকে নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত বাসায় থাকার জন্য সেনাবাহিনী অনুরোধ জানাচ্ছে। বাজার ও জরুরি সেবামূলক এলাকায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।