ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিন বেলা তো দূরের কথা, এক বেলার ভাত জোটানোও কষ্টকর

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
তিন বেলা তো দূরের কথা, এক বেলার ভাত জোটানোও কষ্টকর

ঈশ্বরদী (পাবনা): পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন একেবারে সুনশান।  স্টেশনের চায়ের দোকানদার আশফাক আলী (৫০)। তার আয়েই চলে সংসার ও অনার্স পড়ুয়া মেয়ের লেখাপড়া। করোনার সংক্রমণরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে সব আন্তঃনগর মেইল-লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। 

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে আশফাক আলী আক্ষেপ করে বলছিলেন, তিন বেলা তো দূরের কথা, এক বেলা ভাত জোটানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

রোববার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় জনশূন্য ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দুই নাম্বার প্লাটফর্মে অলস বসে সময় পার করার সময় একথা বলেন তিনি।

 

আশফাক আলী একা নয়, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে বৈধ চা-পানের দোকানি কামাল হোসেন মনু মিয়া, হাবিবের মত অনেকেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তাদের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ।  

আশফাক আলী বলেন, তার আয়ের ওপর চলে সংসার। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে তিন বেলা খাবার খেতে পাওয়াটাই এখন বড় চিন্তা। ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে স্টেশন ফাঁকা। নেই লোক সমাগম। রাস্তায় টহল দিচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঘর থেকে বের না হতে ঘোষণা দিয়ে চলছে মাইকিং। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় এখন না খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।

আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরদী লকডাউন করা না হলেও ২৫ মার্চ থেকে কার্যত গোটা ঈশ্বরদী প্রায় লকডাউন হয়ে আছে। এ সময়ের মধ্যে ফার্মেসি আর নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখতে চলছে নানা কার্যক্রম। আর এই স্বেচ্ছাবন্দিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

আক্ষেপ করে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের চায়ের দোকানদার মনু মিয়া (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে নাকি অসহায় মানুষের জন্য সহযোগিতা এসেছে। কোথাও কোথাও কেউ কেউ রুটি, বিস্কুট, মুড়িসহ শুকনো খাবার দিচ্ছেন। দিনের পর দিন ভাতের ক্ষুধা কি আর শুকনো খাবারে যায়?  সেই সহযোগিতাও আবার মুখ চিনে করা হচ্ছে। তাহলে আমরা যাবো কোথায়।

পান বিক্রেতা আবিদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন পান বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলত। বর্তমানে স্টেশনে মানুষ আসছে না।  সারাদিনে এক কেজি চালের টাকাও জোগাড় করা খুব কষ্ট হয়ে পড়েছে।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ২০ মেট্রিকটন চাল কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তী বরাদ্দ এলে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।