ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
‘করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন’

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব এখন হুমকির মুখে। এ অবস্থায় নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে, যোগাযোগ বন্ধ করে পৃথিবী টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটে চলেছে। তবে একে নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কোনো নেতৃত্ব এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

অথচ বর্তমানে কোভিড-১৯ এর চেয়ে বিশ্বে বড় নিরাপত্তা প্রশ্ন আর কিছু হতে পারে না। কেননা সমগ্র বিশ্বই এর আক্রান্তের শিকার। তাই এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন বৈশ্বিক সমন্বিত উদ্যোগ।

ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্বের বড় বড় সংস্থাগুলোর এখন একত্রিত হওয়া উচিত। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে কাজ করছে, তা প্রশংসাযোগ্য। একইভাবে এই বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে এখন জাতিসংঘের আরো বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সীমানা সিল, প্লেন চলাচল স্থগিত এবং বিভিন্ন শহর লকডাউন করে পৃথিবী যেন বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় প্রকৃতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছি। প্রকৃতি তার শোধ নিচ্ছে। তবে এই সঙ্কট মোকাবেলায় বিচ্ছিন্নতা কোনো সমাধান হতে পারে না।  

‘কেননা বিচ্ছিন্নতা থাকলে অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভবনা থাকে। বিশ্বকে মানচিত্রের মধ্যে বিভক্ত করলেও পৃথিবী অখণ্ড। বিশ্ব নাগরিকদের এ গ্রহের কল্যাণে এখন সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করার কথা ভাবা উচিত। সেই জায়গাটি থেকে আরো মানবিক হয়ে আমাদের মানবিকতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়োজন। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।  ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যদিও অন্যান্য পরাশক্তির নেতারাও একই কথা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  এখন উচিত নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় করে সঙ্কট মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। একই সঙ্গে এ মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল (ইউএনএসসি)।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশই খুবই সীমিত অভিজ্ঞতা নিয়ে করোনা প্রতিরোধের কাজটি করে চলেছে। আমাদের কাছে করোনা ভাইরাস যেমন একটি নতুন অভিজ্ঞতা, ঠিক তেমনি অন্যান্য উন্নত বিশ্বেও একই অবস্থা। যেহেতু এটি একটি নতুন ধরনের ভাইরাস এবং আমরা বিশ্বব্যাপী সবারই এ ভাইরাসের সম্মুখীন। তাই এর আক্রমনটা কীভাবে সমন্বিতভাবে করা যায়, সেটি ঠিক করতে এখন আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসই বেশি প্রয়োজন।

এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে দেশের প্রখ্যাত এ শিক্ষাবিদ বলেন, ইতোমধ্যে সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) দেশগুলো এই সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঠিক তেমনি জাতিসংঘ এবং এর বিশেষায়িত সংস্থার বিশাল নেটওয়ার্ককে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে বিশ্বব্যাপী এ সঙ্কট মোকাবেলা আরও সহজ হবে। বিশ্ব নেতারা আগামীতে কেবল এ মহামারি নয়, যে কোনো সম্ভব্য সঙ্কট মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসবে।

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করে ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নিয়েছে, সেটি আমাদের দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য যথেষ্ট। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। প্রবাস থেকে আমাদের ভাই-বোনেরা যারা আসছেন, তারা নিজেরাই যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে ১৫ দিন হোম কোয়ারানইন্টিন মেনে চলেন, তাহলে কারো মাঝে যদি এই ভাইরাস থেকেও থাকে তাহলে সেটি হয়তো আর সংক্রমিত হবে না।

নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে এ সময়ে দেশের জন্য সমষ্টিগত চিন্তা করা উচিত বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।  

তার মতে, বাংলাদেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর যেগুলো আছে, সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু থেকেই আরো কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত ছিল। আমরা দেখেছি, বিদেশ থেকে এসেছে এবং তাদের কোয়ারেন্টিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিটা কাম্য নয়। এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়া এবং একই সঙ্গে আমাদেরও নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে এই সময়ে দেশের জন্য সমষ্টিগত স্বার্থ ভাবনা ভাবতে হবে।

‘আমার নিজস্ব আরাম আয়েশের জন্য আমি যদি এমন কাজ করি, যেটা এই সময় আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকর, সেটা করাটা তো ঠিক নয়। আমি মনে করি আমরা এখন পর্যন্ত যে পর্যায়ে এসেছি, সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সেটা হয়তো যথেষ্ট। কিন্তু সামনের দিনের যে ঝুঁকিগুলো আছে, তা মোকাবিলা করার জন্য এখনই পরিপূর্ণ প্রস্তুতির দরকার আছে। ’

চিকিৎসকদের জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) যথেষ্ট সংখ্যক সংরক্ষণ করা, করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ কিট সংগ্রহ করার মতো বিষয়গুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন ড. আরেফিন সিদ্দিক।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
এইচএমএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ