ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা স্ত্রীকেও জানাননি সেই ৩ প্রবীণ

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা স্ত্রীকেও জানাননি সেই ৩ প্রবীণ ভাইরাল হওয়া সেই ছবি।

যশোর: যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের নূর আলী গাজী (৭০)। পায়ে চালানো ‘ভ্যানে’ রোজগারের টাকায় জীবিকা নির্বাহ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে বাড়ি বলতে আছে সেই আগেকার আমলের মাটি দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর। তবে, এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিনের আয়ের টাকায় বাজার-সদাই করে সুখেই কাটছিল সংসার।

সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সচেতনতায় এলাকায় প্রশাসনের মাইকিং ও পুলিশ টহল দেখে গত তিনদিন ভ্যান চালাতে বের হননি নূর আলী। কিন্তু টানাপড়েনের সংসারে রান্নার চাল-তরকারি কেনার উদ্দেশ্যেই সামান্য রোজগার করতে ভ্যান নিয়ে বের হন।

সে মোতাবেক কিছু টাকা আয় করে কেনাকাটা করতে চিনাঢোলা বাজারে যান। এরইমধ্যে, এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত জনসম্মুখেই তাকে ‘তুই-তোকারি ভাষায়’ কথা বলে কান ধরতে বলেন। এতে অসহায় হয়েই সত্তরোর্ধ্ব নূর আলী কান ধরে দাঁড়ালে এসিল্যান্ড সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও করেন-ছবিও তোলেন। বাড়ি ফিরে এ লজ্জার কথা কাউকে জানাতে পারেননি ওই প্রবীণ।

তিনি সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়ে-জামাই আছে, প্রতিবেশী, ছেলে-স্ত্রী তাদের কিভাবে এ লজ্জার কথা বলব? এজন্যই কাউকে বলিনি, বিচার দিয়েছি ‘আল্লাহর কাছে’।

পরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ লাউড়ি গ্রামে গিয়ে কথা হয় এসিল্যান্ডের নির্দেশে ‘কান ধরা’ ভুক্তভোগী বাবু মোড়ল (৬৭) ও একই গ্রামের আসমত উল্লাহর (৭৪) সঙ্গে।

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, বাবু মোড়ল প্রতি বিকেলে অল্প কিছু তরকারি নিয়ে হাটের ফুটপাতের বসে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সামান্য আয়ের টাকায় চার মেয়ে এক ছেলেকে বড় করেছেন। তিনিও অত্যন্ত গরিব। এছাড়া প্রবীণ আসমত উল্লাহ মাঠের আয়ে কোনোভাবে সংসার চালান। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এক ছেলে-স্ত্রীকে নিয়ে গরিব হলেও সম্মানের সঙ্গে জীবন ধারণ করছেন।

ভুক্তভোগীরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসিল্যান্ড স্যার’ আমাদের নাতির বয়সী। তিনি কোনো কিছু না জেনেই লোকজনের মধ্যেই আমাদের কান ধরে দাঁড়াতে বাধ্য করলেন। জীবনে আমরা কেউ এমন অপমানিত হইনি। শুধু তাই নই, এ ঘটনা মেয়ের জামাই-আত্মীয়-স্বজন জানলে তাদের সামনে যাওয়ার পরিস্থিতি কি থাকবে? জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো এটা ভাবিনি। তবুও আমরা অপরাধী, আল্লাহ আমাদের অপরাধ দেখেছেন ...  তিনি যেন বিচার করেন!

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।