ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনার ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
করোনার ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা বৃদ্ধাকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জীবন এবং পেশা এই দুইয়ের মধ্যে মানবতা আর দায়িত্বকেই বেছে নিয়েছেন সেবাখাত সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ থাকতে সবাই যেখানে বাসায় অবস্থান করছেন, সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রশাসন, সামরিক বাহিনী, স্বাস্থ্যখাতের সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্স এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পেশাজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দেশজুড়ে। এই সময়ে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধে এবং স্ব স্ব নিরাপত্তায় জনগণকে নিজ নিজ অবস্থান বিশেষ করে বাসায় থাকতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শপিংমল, গার্মেন্টস, কলকারখানা, গণপরিবহন, রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদনকেন্দ্র থেকে শুরু করে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মাস্ক বিতরণ করছেন পুলিশ সদস্যরা।                                          ছবি: শাকিল আহমেদশুধু সেবাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয়দ্রব্য সংশ্লিষ্টরা এর আওতামুক্ত। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং জনগণ যেন অহেতুক বাসা থেকে বের না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং জন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সহযোগিতায় আছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও। সরাসরি মাঠে থেকে কাজ করছেন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে আখ্যায়িত গণমাধ্যমের কর্মীরাও। সবাই জানেন যে, এই দায়িত্ব পালনে আছে ঝুঁকি, আছে খোদ মহামারি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও। তবুও ব্যক্তি স্বার্থ আর নিরাপত্তার চেয়ে মানবিক দায়িত্বকেই বেছে নিয়েছেন তারা। জীবনের ঝুঁকির মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পেশাগত প্রতিশ্রুতি পালনের।

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দায়িত্বরত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার বলেন, ‘ঝুঁকি আছে তাও কাজ করে যেতে হবে। সড়ক ফাঁকা, এর মাঝে কেউ বেপরোয়া গাড়ি চালালে দেখতে হবে। ঘর থেকে কেউ যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া বেরোলে পুলিশের পাশাপাশি আমরাও দেখছি। আমাদের কাজ ট্রাফিক নিয়ে কিন্তু সড়কে ট্রাফিক না থাকলেও আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায় না। আমাদের নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। রেইন কোটকেই পিপিই বানিয়েছি। নির্দেশনা আছে ইউনিফর্মে ফুল হাতা শার্ট পরার। এই গরমে ফুল হাতা শার্টের ওপর মোটা রেইনকোট গায়ে দিয়ে ডিউটি করছি। ’.করোনা ইস্যুতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন চিকিৎসকেরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিষয়ক জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেস্থেশিওলজিস্ট ডা. তৌহিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছি। দেশে তো করোনায় চিকিৎসকেরা আক্রান্তও হয়েছেন। আমাদের কাছে সব ধরনের রোগী আসেন। কে করোনায় আক্রান্ত চট করে তো বোঝা যায় না। আর কাউকে তো আমরা চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখতে পারি না। পেশার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাসায় গেলে বা বাসা থেকে বেরোলে স্বজনেরা কান্নাকাটি করেন। বলে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে অন্য কিছু যেন করি। স্বজনদের এটা বুঝিয়েই বাসা থেকে বের হই যে, আমার মতো সবাই যদি ডাক্তার বা নার্স হওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে তোমাদের কারও কোনো অসুখ হলে চিকিৎসা দেবে কে? যা হয় হবে, আল্লাহ ভরসা। চিকিৎসকদের অনেকেই অনেক কথা বলেন। দুই একজন একটু অন্যরকম থাকতেই পারেন। কিন্তু আমি এবং আমার মতো প্রায় সব চিকিৎসকই এই দুঃসময়ে জনগণের পাশে তাদের সেবায় আছি। ’

করোনার মতো এমন জটিল পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে সর্বশেষ এবং বস্তুনিষ্ঠ সঠিক সংবাদের জোগান দিতে কাজ করে যাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। .দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের সম্পাদক জুয়েল মাজহার বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায়ই ‘গুজব’ বিষয়টি দেখা যায়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের গুজব রটিয়ে থাকেন। এসব গুজবের অসত্যতা সাধারণ নাগরিকেরা চট করেই বুঝতে পারেন না। আর ঠিক তখনই মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা এবং ভূমিকার বিষয়টি সামনে চলে আসে। একটি তথ্য সঠিক না ভুল তা মূল ধারায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়। কাজেই এমন সংকট মুহূর্তে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। জানি ঝুঁকি আছে, বিশেষ করে ফিল্ড রিপোর্টারদের, তবুও তার মাঝেই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
এসএইচএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।