এক পুলিশ পরিদর্শকের মোবাইলে ধারণ করা সেই ছবিটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
ছবিটি দারুণভাবে দাগ কাটে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের মনে।
শুধু তাই নয়, সৈকতের ছবির ঠিক বিপরীত একটি ছবি শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে। যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন নিজেই তার বাংলোতে বসে ইমনকে নাস্তা করাচ্ছেন। জীর্ণশীর্ণ সেই পুরনো পোশাকের পরিবর্তে গায়ে জড়িয়েছে নতুন টি-শার্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফেসবুকে ছবিটি দেখেই নিজের অজান্তেই মনটা ভারি হয়ে যায়। তাই আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বললাম শিশুটির খোঁজ নিয়ে, পেলে নিয়ে আসতে। তাই শুক্রবার রাত একটার দিকে সৈকতের বালুচর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে আমার বাংলোয় নিয়ে আসে। ’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ইমন এখন অসুস্থ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্নও আছে। হয়তো কেউ তাকে মেরেছে। তাই তাকে চিকিৎসা করাচ্ছি এখন। ’
ইমনকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমি চাই, ইমন আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। কিন্তু সে বার বার সৈকতে চলে যেতে চায়, কুকুরের কথা বলে। ওখানে থাকতে থাকতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আগে চিকিৎসা করাচ্ছি। সুস্থ হওয়ার পর কোনো একটা ব্যবস্থা নেবো। ’
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সৈকতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে নির্জন বালুচরে কুকুরের সঙ্গে শুয়ে আছে একটি শিশু। বিষয়টি আমার মনেও খুব দাগ কাটে। তাই শিশুটির একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করি। মুহূতেই ছবিটি ভাইরাল হয়। ’
তিনি বলেন, ‘ছবিটি দেখেই ডিসি স্যার ইমনকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। একটি ভালো কাজে অংশীদার হতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে। ’
পুলিশ পরিদর্শক মানস আরও বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তার বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামের দাসী মাঝিরপাড়ায়। মা-বাবা তাকে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছিল একটি মাদ্রাসায়। মাদ্রাসায় মওলানা তাকে মারধর করায় সে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সাগরপাড়ে। গত ১০/১২ দিন ধরেই শিশু ইমন কক্সবাজার সাগরপাড়ে থাকছে। ’
প্রশাসকের নির্দেশে শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে বিচকর্মীদের সহায়তায় সমুদ্রসৈকত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন জেলা প্রশাসনের প্রটোকল শাখা, পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান জাহিদ খান ও শিক্ষা ও আইসিটি শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম। রাত ১টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ডিসির বাংলোয় নিয়ে যান তারা। উদ্ধার তৎপরতার পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেন মো. ইমরান জাহিদ খান।
তিনি সেখানে লিখেন ‘পর্যটনের দায়িত্ব পাওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয়গোষ্ঠীর নানা শ্রেণির লোকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। পর্যটন নির্ভর খেটে খাওয়া এ লোকগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টের স্বীকার মনে হয় বিচে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট বাচ্চাগুলো বিশেষত যখন সে অনাথ। ’
দীর্ঘ স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মধ্যরাতে অনলাইন নিউজে ছেলেটির ব্যাপারটা নজরে আসে ডিসি স্যারের। এই রাতেই ডিসি স্যার বাচ্চাটিকে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে বলেন। বিচকর্মীদের শুরু করে দেয় খোঁজ করার কাজ। আমি সহকর্মী বড় ভাই সৈয়দ মুরাদকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেই খোঁজাখুজিতে। এবং অবশেষে আমাদের এক বিচকর্মী তাকে খুঁজে পান। এরপর ডিসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওকে নিয়ে আসি ডিসি স্যারের বাংলোয়। এরপর পরিচ্ছন্ন করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করানো ও ওর জীবনের গল্প শোনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
এসবি/এএটি