ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অসহায় বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ালেন রাজশাহীর ডিসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
অসহায় বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ালেন রাজশাহীর ডিসি বৃদ্ধর সঙ্গে কথা বলছেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক। সেখানে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধকে রাস্তার ধারে পুরনো, ছেঁড়া কাগজ নড়াচড়া করতে দেখেন। বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াচ্ছেন।

এটি জানার পর ওই বৃদ্ধকে জেলা প্রশাসক আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। আরও সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেন।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিদর্শনকালে তিনি ওই বৃদ্ধের দেখা পান। পরে এই নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি লিখা পোস্ট করেন। যেখানে যশোরের মণিরামপুরে তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ছবি তোলার ঘটনায় এক এসিল্যান্ড তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন, সেখানে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বৃদ্ধকে সহায়তা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

জীবিকার প্রয়োজন করোনা:

’করোনা পরিস্থিতিতে লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেয়র তানোর পৌরসভা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তানোর বাজার পরিদর্শন, অকারণে যেসব লোকজন বাজারে ছিলেন তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাওয়া। এ সময় হঠাৎ ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ মানুষকে রাস্তার ধারে কিছু পুরনো, ছেঁড়া কাগজ নড়াচড়া করতে দেখে কাছে যাই। আমরা কাছে যেতেই এবং সাথে পুলিশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে হাত জোর করে দাড়িয়ে বলেন, 'বাবা আমার যদি কোনও ভুল হয়, মাফ করে দাও, আমি আর বাজারে আসবো না। ' আমি সাথে সাথে বৃদ্ধকে বললাম কোনও ভুল না। ভীষণ মায়া লাগলো বৃদ্ধকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতিপুতিদের সাথে খেলা করার কথা। কিন্তু হায় দরিদ্র্যতা তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে ক'টি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছো। তার উপর বিশ্ব কাঁপানো করোনা। কিন্তু এই বৃদ্ধের দরিদ্র্যতাকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে। বৃদ্ধকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বললাম, আপনি কিছু চাল ডাল কিনে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন আর বাজারে আাসবেন না। তিনি বললেন, বাবা আর আসবো না। মনটি খারাপ হয়ে গেলো। জানি না তার বাড়িটি কেমন, তার বাড়িতে কে কে আছেন? উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে বললাম। হায় করোনা, তুমি সকলকে একটু করুণা করো। অন্তত নাম না জানা এই বৃদ্ধের কোনো ক্ষতি করো না। এই মিনতি করি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। সারা বিশ্ব হোক করোনা ও করুণা মুক্ত। ভালো থেকো বৃদ্ধ বাবা। আমি তোমার খবর রাখবো নিশ্চয়। '

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।