ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বই-টেলিভিশন আর পরিবার নিয়ে কাটছে সময়

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
বই-টেলিভিশন আর পরিবার নিয়ে কাটছে সময় ছবি প্রতীকী

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক আর টানা ১০ দিনের বাধ্যতামূলক ছুটিতে এক ধরনের গৃহবন্দি দেশের জনগণ। আতঙ্কিত এই সময়টা তাই ঘরে বসেই কাটাচ্ছেন সবাই। খুব জরুরি না হলে বাসা থেকে বেরোচ্ছেন না কেউই। যেসব মানুষ হইহুল্লোড় করে সময় কাটাতে পছন্দ করেন, তারাও এখন সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেদের।

শনিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্রই। ঘরবন্দি এই দিনগুলোতে কেউ অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন, কেউ দেখছেন সিনেমা, পড়ছেন বই, শুনছেন গান।

এছাড়া পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি রান্না করা, ব্যায়াম করা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়েও মঙ্গল কামনা করছেন অনেকে।

তিনদিন হলো নিজ বাড়ি থেকে খুব প্রয়োজন না হলে একদমই বের হন না রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সরকারি কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম। সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে রাখেন অনলাইনেই। পরিবারে অন্য চার সদস্যও এ সময় রয়েছেন ঘরবন্দি অবস্থায়।

রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নিজেদের ভালো থাকার প্রয়োজনেই বাধ্য হয়ে এখন আমাদের গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। অন্য সময় হলে অনেক পরিকল্পনা করা যেতো। পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। তাই পরিবারকে সময় দিচ্ছি। ঘরের কাজে সাহায্য করছি। পরিবারের সবাই মিলে সময়টা পার করার চেষ্টা করছি। অন্য সময়তো এটা হয় না। এছাড়া ভাইরাসের এই ভয়াবহতায় মনটাও ভালো নেই তেমন। তাই নামাজ পড়ে সবার জন্য দোয়াও করছি, যেন সবাই ভালো থাকে।

ক্লাস না থাকলে বেশ দেরিতেই ঘুম থেকে ওঠেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা শারমিন শারীফ লাবণ্য। কিন্তু করোনার এই সময়ে আগের মতো ঘুমাতে পারছেন না তিনি। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন স্বামী এবং বিশেষ করে ছোট মেয়েকে নিয়ে। অলস সময় পার করতে করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন তিনি।

কীভাবে সময় কাটছে জানতে চাইলে শারমিন বলেন, টেলিভিশন চালুই রাখছি, খবর দেখছি। সময়টা রিল্যাক্সের নয়। পৃথিবী একটা বিপদের মধ্যে আছে, এ নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমার অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন করতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস বা ভিডিওবার্তা দিচ্ছি। চারপাশ থেকে পাওয়া সচেতনতামূলক তথ্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এছাড়া মুভি দেখা, রান্না করা, সন্তানের দেখাশোনা করার পেছনেও একটা বড় সময় কেটে যাচ্ছে। আর এখন তো দুর্যোগ কাটাতে সবারই সাবধান হওয়া উচিত।

ঘরে আবদ্ধ থেকে এই সময়টা যে শুয়ে-বসে কাটাচ্ছেন সবাই-তা কিন্তু নয়। সাধারণ মানুষের অনেকেই এখন তাদের সময় ব্যয় করছেন টেলিভিশন বা ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন সাইটে সিনেমা দেখে বা বই পড়ে। অনেকেই আবার নিজেদের ছোট ছোট কাজগুলো শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এই বিষয়ে মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ বলেন, স্ত্রী ও সাড়ে পাঁচ বছরের সন্তানকে সময় দিচ্ছি এখন। প্রয়োজন ছাড়া বেরোচ্ছি না। সন্তানের সঙ্গে গেম খেলছি, টেলিভিশন দেখছি, ফেসবুকে ঢুঁ মারছি। বিশেষ করে পুরনো সিনেমাগুলো এবং সন্তানের পছন্দ অনুযায়ী কোনো সময় কার্টুন বা এনিমেটেড মুভি দেখেও সময় কাটছে। সত্যি বলতে সবসময় বাড়িতে থাকা চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জকেই এখন আমরা নিজেদের ভালোর জন্য গ্রহণ করে নিয়েছি।

করোনার প্রকোপে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। ফলে গৃহবন্দি অবস্থায় অলস সময়ই কাটছে বিশ্ববাসীর মতো আমাদের দেশের মানুষগুলোও। তবে সংকটময় এ পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি নির্মল বিনোদনের জন্য কোনো কিছুই বাকি রাখছেন না তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২০
এইচএমএস/এএটি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।