ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে ভিক্ষুক পুনর্বাসন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে ভিক্ষুক পুনর্বাসন

ফেনী: ভিক্ষার হাতকে কর্মের হাতে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে মুজিব জন্মশতবর্ষে ফেনীকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কর্মসূচি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপে ছয় উপজেলার ৬০ ভিক্ষুকের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ১৮ লাখ টাকার অনুমোদন দিয়েছেন ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নির্দেশনা অনুসারে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের টাকা নিয়ে প্রাথমিকভাবে এ কর্মসূচির জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

তিনি জানান, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।


জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাধারণ শাখা সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে নির্বাচিত ৬০ জনের ইচ্ছানুযায়ী তাদের পুনর্বাসন করা হবে। এগুলোর মধ্যে হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন, সেলাই মেশিন, অটো রিকশা, ভ্যান গাড়ি, ভাসমান ফলের দোকান, হাতে বোনা চাটাই এবং কসমেটিকস-স্টেশনারি ব্যবসা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

একই সূত্র জানায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে ২০১৮ সালে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ফান্ড গঠনের মাধ্যমে কর্মসূচির অর্থায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই টাকার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পাওয়া অনুদান যোগ করে এ পর্যন্ত সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৫২৪ টাকা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. সুমনী আক্তার জানান, তালিকাবদ্ধ ভিক্ষুকদের মধ্যে উপজেলা প্রতি ১০ জন করে ছয় উপজেলা হতে ৬০ জনকে প্রথম ধাপে পুনর্বাসনের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।  

তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ তালিকা তৈরি করেছেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন আক্তার জানান, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য ইউএনওকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের কমিটি রয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এতে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।

ভিক্ষুক পুনর্বাসনে প্রথম ধাপে সদর উপজেলা হতে ১০ ভিক্ষুক নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিক্ষুকের চলমান আর্থিক অবস্থা, বয়স ও কর্মক্ষমতা বিবেচনায় রেখে তালিকা করা হয়েছে।
সাধারণ শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপের ৬০ ভিক্ষুকের মধ্যে নারী ৩৭ জন। প্রতিবন্ধী রয়েছেন সাতজন।

সাধারণ শাখায় দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার শিরিন জানান, ফেনী সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো ২০১৯ সালের ভিক্ষুক তালিকা অনুযায়ী এ কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ভিক্ষুকের সংখ্যা এক হাজার ৭২৯ জন। এদের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে ৩৪৮ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।  

তিনি জানান, অবশিষ্ট এক হাজার ৩৮১ জনের তালিকার ভিত্তিতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামের খোতিজা বেগম (৪৫) প্রথম ধাপের ৬০ জন সুবিধাভোগীদের একজন। গবাদি পশু পালনে আগ্রহী খোতিজা বেগম বলেন, মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। আমি ভিক্ষুক তাই ভালো সম্বন্ধ আসছে না।

গরু পেলে আর ভিক্ষা করবেন না জানান তিনি।

সদরের কাজিরবাগ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাপুর গ্রামের জাফর আহমদ (৪৪) ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সহযোগিতা পেলে মালামাল পরিবহনের কাজ করবেন বলে জানান। এছাড়া সহযোগিতা পেলে নিজের অল্প জমিতে সবজি চাষের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
এসএইচডি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad