ঢাকা: অচিরেই খুলছে না মালয়েশিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার । প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অবশ্য বাংলাদেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বড় এই শ্রমবাজার উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যত তৎপরতাই চলুক, কাজে খুব একটা অগ্রগতি নেই। কারণ বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করতে হবে। আগস্ট মাসে বায়রার একটি প্রতিনিধি দল দেশটির শ্রমমন্ত্রী ড. সুব্রাহ্মানিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
এর আগেও একবার মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। যা পুনরুদ্ধার করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ আট বছর পর তা পুনরায় চালু হয়।
সূত্র জানায়, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি। অর্থাৎ এসব দেশ থেকে মালয়েশিয়া নিয়মিত শ্রমিক নেয়। বাংলাদেশ থেকে বিশেষ প্যাকেজে অনিয়মিতভাবে শ্রমিক নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি না হওয়ায় নিয়মিতভাবে শ্রমিক পাঠানো কখনোই সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, আসলেই একবার শ্রমবাজার বন্ধ হলে তা উদ্ধার করা সত্যিই দুরূহ। এর আগেও বাংলাদেশকে এ ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী মালয়েশিয়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। বায়রার প্রতিনিধি দলও একাধিকবার মালয়েশিয়া সফর করেছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান সচিব ড. জাফর আহমেদ খান মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ার বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি হতে পারেনি। সোর্স কান্ট্রি হতে পারলে নানারকম সুবিধা পাওয়া যায়। কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে দরকষাকষির সুযোগও থাকে। মালয়েশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন দপ্তর বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি করার পক্ষে। কিন্তু সেদেশের সংসদ তা অনুমোদন করেনি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ার প্রায় ২০ হাজার নারীকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর অনেক বাংলাদেশী স্ত্রী- সন্তান ফেলে রেখে নিজের দেশে চলে যায়। অথচ অন্য দেশের অভিবাসীরা সচরাচর তা করেন না। বেতন বেশি পেলে ঘনঘন চাকরি পরিবর্তন করে বাংলাদেশিরা।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ৫৫ হাজার শ্রমিকের স্থলে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল। যা মালয়েশিয়ার সরকারের চোখে বাংলাদেশের এক ভয়ঙ্কর নেতিবাচক ভাবমূর্তি দাঁড় করায়। এরপরই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ সময় ০০২৭ ঘণ্টা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০