ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশাসনে নারীর জয়: সচিব ১০, ডিসি ৮ জেলায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
প্রশাসনে নারীর জয়: সচিব ১০, ডিসি ৮ জেলায়

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়- সবখানেই নারীর জয় জয়াকার। এর বাইরেও প্রশাসনে নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী।

বর্তমানে সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় সরকারে রয়েছেন ১০ জন নারী কর্মকর্তা, আর মাঠ পর্যায়ে ৬৪ জেলার মধ্যে আট জেলাই সামলাচ্ছেন নারী জেলা প্রশাসক।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ গত ৪ মার্চের তথ্যানুযায়ী, সরকারের সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী কর্মকর্তা আট জন, ৫১১ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৮৩ জন, ৬৩৬ জন ‍যুগ্ম-সচিবের মধ্যে ৮১ জন নারী কর্মকতা রয়েছেন।

আর এক হাজার ৬৯৫ জন উপসচিবের মধ্যে ৩৪৯ জন নারী, এক হাজার ৫৪৯ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের মধ্যে ৪৫৪ জন নারী এবং এক হাজার ৫২৮ জন সহকারী সচিবের মধ্যে ৪৭২ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। এর বাইরেও রয়েছে ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনের নারী কর্মকর্তা।

১০ নারী সচিব:
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ১০ জন নারী কর্মকর্তা দক্ষতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সিনিয়র সচিব রয়েছেন দু’জন কর্মকর্তা। সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) হিসেবে রয়েছেন সাহিন আহমেদ চৌধুরী ও সদস্য শামীমা নার্গিস।

নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম।

আর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান উম্মুল হাসনা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি রেক্টর (সচিব) বদরুন নেছা।

৮ জেলায় নারী ডিসি:
নারী জেলা প্রশাসকরা হলেন- আনজুমান আরা নড়াইলে, নাজিয়া শিরিন মৌলভীবাজারে, সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন নরসিংদীতে ও দিলসাদ বেগম রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়াও শাহিদা সুলতানা গোপালগঞ্জের ডিসি, সাবিনা ইয়াসমিন পঞ্চগড়ের, মোছা. সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের, আনার কলি মাহবুব শেরপুরের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসনে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বাংলানিউজকে বলেন, সিভিল সার্ভিসে টপ পজিশনে দিতে দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা- সবকিছুই লাগে। শীর্ষে যারা আছেন তারা নারী হিসেবে যায়নি, তারা মানুষ হিসেবে যোগ্যতা নিয়েই যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়ে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেন। তারমধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত তিনি নারীদের সচিব করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনে এখন ৮/৯ জন নারী সচিব। এছাড়াও রয়েছেন অনেক অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব থেকে পরের পদগুলোয়।

‘সবাই সহযোগিতা করলে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বার বার ক্ষমতায় আসবে, নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে এবং প্রশাসনেও নারীদের সংখ্যাও বাড়বে’, মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

খাদ্যসচিব ও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক’র সভাপতি ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম মনে করেন প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিয়েছেন, সে সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।

খাদ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের জন্য অনেক ক্ষেত্র অবারিত করে দিয়েছে, যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে নারী কর্মকর্তাদের যোগ্যতা অনুসারে বসানোর চেষ্টা করছেন। নারী কর্মকর্তারা যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন সব সময় পায় না, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এবং দিক নির্দেশনায় আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি।

‘তিনি যে সুযোগ দিচ্ছেন, এ সুযোগটা যথাযথভাবে কাজে লাগো উচিত। ভবিষ্যতে যাতে আরো বেশি বেশি সুযোগ পাই, এ ধরনের পদ অলঙ্কৃত করতে পারি আমরা। ’

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব ও বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব সায়লা ফারজানা বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনের পূর্বের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে, প্রবেশ পদ এবং নীতি নির্ধারণী পদগুলোতে নারীরা এখন আগের তুলনায় বেশি আসছে।

‘কারণ হলো, যোগ্যতার বিচারে তাদের সিলেক্ট করা হচ্ছে। কোটার জন্য আমাদের আর অপেক্ষা করতে হয় না, মেয়েরা এতো ভালো করছে যে তারা পারমেন্স দিয়েই পদ ও পদায়ন পাচ্ছে। ’

সায়লা ফারজানা বলেন, মাঠ পর্যায়ে ডিসি, ইউএনও, সিভিল সার্জন, এসপির মতো সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পদগুলোতে মেয়েরা কাজ করছে। তারা প্রুভ করতে পেরেছে পুরুষ কলিগদের সঙ্গে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়েও ভালো করছে।

মুন্সিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নসহ সবকিছুতেই নারীরা যেভাবে গুছিয়ে বা সিনসিয়ারলি কাজ করতে পারে সেটার প্রতি সরকারের আস্থা আছে। তবে এখনও সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পদগুলোতে নারীরা খুব বেশি আসছে না। এসব জায়গায় নারীদের বিবেচনায় নিলে তারা কাজ করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।